শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩০:২৮

সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর মুহুর্মুহু গুলি, আগুন, ছুটাছুটি

সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর মুহুর্মুহু গুলি, আগুন, ছুটাছুটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বরতা থামছেই না। গতকাল শুক্রবারও নাফ নদীর ওপারে মংডু এলাকার পাঁচটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে সেনাবাহিনী। এ সময় রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলিও করেছে।

আরাকানে গত ২৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরতা শুরু হয়। এক মাস ধরে প্রতিদিনই জ্বলছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম। জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন অসহায় রোহিঙ্গারা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও নিন্দাকে তোয়াক্কা না করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা, , নির্যাতনসহ নির্মম নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

সীমান্তের প্রত্যক্ষদর্শীর জানান, গতকাল শুক্রবার ও আগের দিন বৃহস্পতিবার দক্ষিণ মংডুর ফ’খালীর রোহিঙ্গা গ্রাম পুতিপাড়ায় অগ্নিসংযোগ করে সেনাবাহিনী। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় রোহিঙ্গা বসতবাড়িগুলো। ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরের চালিপ্রাং থেকে ভিডিও ধারণ ও ছবি করেন কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক।

উখিয়ার থ্যাংখালী সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে কালো ধোঁয়া সীমান্তের এপার থেকে তাকালেই চোখে পড়ে। সীমান্ত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতবাড়িতে দেয়া আগুনের ধোঁয়া এটি। এ সময় উখিয়ার থ্যাংখালীর অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিক থেকে ওখানে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। এই প্রতিবেদকসহ সীমান্তের অনেকেই এই ধোঁয়া দেখতে পান।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের গ্রামে আবারো নতুন করে আগুন দেয় মিয়ানমারের সেনা ও রাখাইনদের সংগঠন নাডালা বাহিনী। আগুনের লেলিহান শিখা সীমান্তের এপার থেকেও দেখা গেছে। এ সময় সীমান্তের বাংলাদেশ অংশ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন সীমান্তবাসী।

এলাকাবাসী জানান, তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকা থেকে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারও রোহিঙ্গা। এক মাস ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছেন।

গত বৃহস্পতিবার মংডুর রোহিঙ্গা গ্রাম নয়াপাড়া, কাজিরবিল এবং রাবাইল্লা সেনা ও রাখাইনদের দেয়া আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে ১৫০ জনের মতো সশস্ত্র রাখাইন ও সেনা সদস্য গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে। এ সময় রোহিঙ্গাশূন্য বাড়িগুলোতে তারা লুটপাট চালায়। এসব গ্রামের বেশির ভাগ রোহিঙ্গা সেনা তাণ্ডবের ভয়ে আগেই বাংলাদেশ চলে এসেছেন। যারা থেকে গিয়েছিলেন তাদের বেধড়ক মারধর ও ধাওয়া করে সৈন্যরা। ফলে তারা পাহাড়ে আশ্রয় নেন ও পরে বাংলাদেশে চলে আসেন। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা জানান, হামলাকারীরা কাচের বোতলে পেট্রল ঢেলে তাতে আগুন দিয়ে রোহিঙ্গা বাড়ির চালে নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ৪৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৯টি মসজিদ ও ৭টি মক্তব।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে