জি. মুনীর : অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসঙ্ঘে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ও ধৈর্য দুই-ই আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সুরক্ষা দিতে যদি বাধ্য করা হয়, তবে উত্তর কোয়িরাকে ধ্বংস করে দেয়া ছাড়া তাদের হাতে কোনো বিকল্প থাকবে না। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেট ম্যান’ নামে অভিহিত করে বলেছেন, এই রকেট ম্যান এখন নিজের ও তার সরকারের জন্য সুইসাইড মিশনে আছেন। তিনি আরো বলেনÑ সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রস্তুতি, ইচ্ছে ও সক্ষমতা’ আছে। কিন্তু এটি প্রয়োজন হবে না, যদি বাকি বিশ্ব উদ্যোগ নেয় পিয়ংইয়ং সরকারকে থামিয়ে দিতে। তিনি এ-ও বলেন, ‘এটিই হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের কাজ। দেখা যাক তারা কী করে।’
ট্রাম্প ইরান প্রসঙ্গে বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি তাদের বিপুল জনগোষ্ঠীর সম্পদ লুণ্ঠন করছে। সারা দুনিয়া বোঝে, ইরানের জনগোষ্ঠী পরিবর্তন চায়। তিনি ইরানের ব্যাপারে দেখেশোনে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন। উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প এখন বলছেন, ইরানের পারমাণবিক চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর মধ্যকার সবচেয়ে খারাপ চুক্তি।
তার এসব বক্তব্য থেকে মনে হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ও জাতিসঙ্ঘকে ট্রাম্প বাধ্য করতে চান ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে দেশ দু’টিকে থামিয়ে দিতে। আর তারা তা না করলে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ব্যবস্থা নিতে তথা যুদ্ধে নেমে দেশ দু’টিকে ধ্বংস করে দিতে বাধ্য হবে। জানি না, ট্রাম্প কোন ধরনের হুঁশে থেকে এসব কথা বলছেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে ‘টোটালি ডেস্ট্রয়’ করে দেয়ার কথা বলেছেন। এর অর্থ দেশটির আড়াই কোটি লোককে পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় করে দেয়া। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে ভিন্ন ধরনের এক গণহত্যার উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটির ভুল নেতৃত্বের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশু-বয়স্ক লোককে হত্যা করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। পৃথিবীতে আণবিক বোমা নিক্ষেপের একমাত্র গৌরবের(!) অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রই।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টে জাপানের হিরোশিমায় পৃথিবীর প্রথম আণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এর তিন দিন পর এরা নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা হয় আরেকটি আণবিক বোমা। এর ফলে হিরোশিমায় নিহত হয় ২০ হাজার জাপানি সৈন্য ও ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২৫ হাজার বেসামরিক লোক। অপর দিকে নাগাসাকিতে নিহত হয় ৫০ থেকে ৮০ হাজার লোক। তা ছাড়া এই বোমার ক্ষতিকর প্রভাব এখনো বয়ে বেড়াছে হাজার হাজার জাপানি। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করেছে নাপাম বোমা। সেখানে মার্কিন সৈন্যরা হত্যা করেছে কয়েক লাখ বেসামরিক লোক। ভিয়েতনামে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ইতিহাসেরও জন্ম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে পরিচালিত ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে ইতোমধ্যেই হত্যা করা হয়েছে ১০ লাখ মানুষকে। এরপরও এখন অব্যাহতভাবে চলছে যুদ্ধ। এখন ট্রাম্প বলে চলেছেন, এবার আক্রমণ করা হবে ইরানের ওপর। আর উত্তর কোরিয়াকে তো টোটালি ডেস্ট্রয়ের ঘোষণা আছেই। জানি না, যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধোন্মাদনার শেষ কোথায়।
আর যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধের দামামা বাজানোর কথা যখন শুনছি, পাশাপাশি তখন বিশ্বের এই বৃহত্তম সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভিন্নধর্মী কিছু খবরও আসছে। এসব খবর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ব্যাপারে শুনতে হবে, তেমনটি কেই ভাবেননি। দ্রুতগতির দু’টি ইউএস নেভি শিপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে একটি ধীরগতির বাণিজ্যিক জাহাজের সাথে, যাতে দুঃখজনক প্রাণহানিও ঘটেছে।
এর বিমানবাহিনী অব্যাহতভাবে কয়েক বছর ধরে আকাশযুদ্ধ জারি রেখেছে, অথচ এখন শোনা যাচ্ছে এর কমব্যাট জেট চালানোর মতো পর্যাপ্তসংখ্যক পাইলট নেই। এর গ্রাউন্ড ট্রুপস এখন লড়াই করছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা এর আগে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পেয়েছে সিআইএর কাছ থেকে। এরই মধ্যে অতিমাত্রিক পীড়নের মুখে পড়া স্পেশাল অপারেশন ফোর্স ক্রমবর্ধমান চাহিদার মুখে, কারণÑ তাদের মানসিক বিকৃতি ও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। শোনা যাচ্ছে, ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রক্সি আর্মি আর বিশ্বস্ত নয়। এরা প্রায়ই আমেরিকার দেয়া অস্ত্র কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এগুলো যাচ্ছে বিভিন্ন শত্রুগোষ্ঠীর হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ ধরনের আরো নানা হতাশাজনক খবর আসছে, যখন দেশটি প্রতিরক্ষা খাতের খরচ আরো বেড়ে উঠছে, যেখানে এ খাতে বছরে খরচের পরিমাণ প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার।
প্রশ্ন উঠছেÑ নৌবাহিনীর অতি উন্নতমানের জাহাজের কেন ধাক্কা লাগবে একটি মামুলি কার্গোর সাথে? বিমানবাহিনীতে কেন থাকবে ১২০০ পাইলটের ঘাটতি? কেন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপারেশন ফোর্স মোতায়েন করা হবে বিশ্বের সবখানে, কেন দুনিয়াজুড়ে থাকতে হবে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি? কিন্তু বিজয় অর্জিত হবে না কোথাও? কোনো গোয়েন্দাদের ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে দেশ দখলের ঘটনা ঘটবে? কেন আবার উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধের হুঙ্কার, যেখানে সব জায়গায় যুদ্ধ চললেও বিজয়ের দেখা মিলছে না?
বিশ্ববাসী দেখছেÑ ১৬ বছর ধরে চলছে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। এ যুদ্ধ যেন কখনো শেষ হওয়ার নয়। বরং তা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, বেশি থেকে বেশি দেশে। ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন থেকে শুরু করে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়। অতি সম্প্রতি নতুন করে যুদ্ধের দামামা বাজছে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধেও। ছোট ছোট সামরিক শক্তির দেশগুলোর শত্রুদের বিরুদ্ধে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ারের পরিচালিত যুদ্ধ-সঙ্ঘাতের যেন শেষ নেই। কবে, কোথায় শেষ হবে এসব যুদ্ধের খেলা কেউ জানে না। সবখানের যুদ্ধেই যেন আমেরিকাই পরাজিত হচ্ছে, বিজয় ধরা দিচ্ছে না। যুদ্ধেরও অবসান ঘটছে না। ফলে আমেরিকার পধহ-ফড় সরষরঃধৎু এখন অনেকের কাছেই বিবেচিত পধহ’ঃ-ফড় সরষরঃধৎু হিসেবে।
কোথাও কোথাও সামান্য ক’টি জাহাজ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। কোথাও কোথাও অবিরাম প্যাট্রোলে নিয়োজিত রাখা হয়েছে খুব কমসংখ্যক পাইলটকে। যেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে ড্রোন ও বোম্বিং মিশন। স্পেশাল অপারেশস ফোর্স (কমান্ডোজ অব এভরিহয়ার) নিয়োজিত করা হচ্ছে দূরবর্তী অনেক দেশে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি দেশ এখন নানাবিধ দ্বন্দ্বে জড়িত। এসব দ্বন্দ্বে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতা আছে; কিন্তু এসব দ্বন্দ্ব নিরসনে আমেরিকার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। এ দিকে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ড্যাভিড পেট্রাউসের মতো আমেরিকার ভেতরের লোকেরা কথা বলছেন ‘জেনারেশনাল ট্রাগলস’ সম্পর্কে, যা অপরিহার্যভাবে কখনোই শেষ হবে না, চলবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ওয়াশিংটনের অনেক রাজনীতিবিদের কাছে এই নোংরা বাস্তব পরিস্থিতির সমাধান হচ্ছেÑ সামরিক খাতে আরো তহবিল ঢালো, নৌবাহিনীর জন্য আরো জাহাজ বানাও, আরো পাইলট প্রশিক্ষণ দাও এবং সামরিক বাহিনীকে ধরে রাখার জন্য এদেরকে দাও প্রণোদনামূলক বেতনভাতা, ক্লান্ত সৈনিকদের দিকে চেয়ে ড্রোনের টেকনোলজিক্যাল ‘ফোর্স মাল্টিপ্লায়ারে’র ওপর নির্ভরতা বাড়াও, ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রক্সি আর্মির ওপর চাপ বাড়াও, উন্নয়ন ঘটাও কমব্যাট পারফরম্যান্সের, ইতাদি ইতাদি।
অত্যন্ত যৌক্তিক কারণে একটি বিকল্পের কথা ওয়াশিংটন কখনোই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে না: সামরিক খাতের তহবিল কমানো, দেশে সৈন্য ফিরিয়ে এনে গ্লোবাল মিশনের আকার কমিয়ে আনা ও মিলিটারির অপারেশনের মাত্রা ও তীব্রতা নিচে নামিয়ে আনা। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন আবেদন নয়। নিশ্চিতভাবে আমেরিকার সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া (এখনো বড় ধরনের পারমাণবিক শক্তি) ও চীন (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এই শক্তি এখন বাড়িয়ে তুলছে এর সামরিক শক্তিমত্তা)। উত্তর কোরিয়া অত্যুক্তি করার মতো প্রদর্শন করছে এর মিসাইল ও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার বন্ধুদেশগুলোকে অস্থির করে তুলতে। আমেরিকায়ও এরা নানা ধরনের সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। এসব চালেঞ্জ মোকাবেলায় সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ জন্য আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, পাইলট, পদাতিক সৈন্য বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
আসলে নাইন-ইলেভেনের পরের ১৬ বছরে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে, বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা আরো শতগুণ বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের ভুল কৌশল অবলম্বনের ফলে নতুন নতুন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে। দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক হস্তক্ষেপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে পুতুলসরকার বসিয়ে কিংবা বিদ্যমান সরকারের সব কাজের প্রতি বাছবিচারহীন সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতা জুগিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রকাশ্য সমর্থক এই যুক্তরাষ্ট্র। ইরান যেখানে হাজার হাজার বছরের সভ্যতার ধারক-বাহক, সেই ইরানের সেই সভ্যতা ধ্বংসের কাজে মেতে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। বানোয়াট নানা অভিয়োগ উচ্চারণ করে বলছে, ইরান আক্রমণের কথা। জাতিসঙ্ঘে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সাথে করা পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে দেয়ার কথা। অথচ ইরান বরাবর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের ইনস্পেক্টরদের অবাধ প্রবেশ ও তদন্তের সুযোগ দিয়ে আসছে। নিঃসন্দেহে পারমাণবিক চুক্তির প্রতিটি ধারা মেনে চলছে।
অথচ বলা হচ্ছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। বলছে, ইরান সন্ত্রাসের মদদদাতা। সাদ্দামের কাছে ‘ওয়েপন অব মাস ডেস্ট্রাকশন’ থাকার মিথ্যে অভিযোগে যেমন ইরাক দখল করে নেয়া হয়েছে, একইভাবে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার ভুয়া অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ইরান দখলের ব্যর্থ প্রয়াস চালালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, যুদ্ধোন্মাদনা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের মাথা থেকে সরেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ও যুক্তরাজ্যের ভেতর থেকে প্রকাশিত নানা রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ইরাক ও আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই সামরিক হস্তক্ষেপের বিদ্যমান অচল কৌশল পাল্টে নতুন কৌশল অবলম্বন। কারণ, বিদ্যমান যুদ্ধবাজ কৌশল এখন পরিণত হয়েছে একটি ‘নো-উইন ওয়ার’ কৌশলে। অস্ত্রের জোরে সব জায়গায় প্রাধান্য বিস্তারের কৌশল কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় আনছে না। এখন ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র পরিচিত ‘গ্রেটেস্ট সেলফ ডিফিটিং ফোর্স’ হিসেবে।
একটা সময় ছিল, যখন বিশ্বে কার্যকর ছিল দু’টি সুপার পাওয়ার : যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন কমিউনিজম ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বিস্তারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের একটা যুক্তি ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র যেন অতি বিজয়ী মনোভাব গ্রহণ করল। সিআইয়ের সাবেক কনসালট্যান্ট চালমার্স জনসন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বৈশ্বিক সাম্রাজ্যিক কাঠামোকল্পনায় অভিহিত করতে থাকলেন ‘আমেরিকা রাজ’ হিসেবে। সে ধারণা থেকেই বিশ্বজুড়ে সামরিক ঘাঁটি বসিয়ে সেই আমেরিকা রাজ কায়েমের প্রয়াস শুরু হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ ও বৃহত্তর মধ্যপ্রচ্যে (লিবিয়া, নিরিয়া, ইয়েমেন ও আরো দেশে) সামরিক হস্তক্ষেপ ডেকে এনেছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও কলহ। দুঃসহভাবে বাড়ছে সামরিক-বেসামরিক লোকক্ষয় ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি। সেই সাথে বাড়ছে মানবিক সঙ্কট। তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী হামলা জিহাদিস্টদের কর্মকাণ্ড যেন আরো জোরালো করে তুলছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে এখন গোটা পৃথিবীটাই হয়ে উঠেছে আমেরিকার সৈন্যদের যুদ্ধমঞ্চ। বিদেশের মাটিতে রয়েছে আমেরিকার ৮০০ সামরিক ঘাঁটি। প্রতিবছর আমেরিকার কমান্ডোদের মোতায়েন করা হয় ১৩০টিরও বেশি দেশে। তাতেও সন্তুষ্ট নয় পেন্টাগন। শুধু জলে-স্থলে-আকাশেই নয়, মহাকাশে, সাইবার স্পেসেও চাই তাদের প্রাধান্য। টোটাল ইনফরমেশন অ্যাওয়ারনেসের জন্য রয়েছে ১৭টি গোয়েন্দা সংস্থা, যাদের পেছনে বছরে খরচ করা হচ্ছে ৮ হাজার কোটি ডলার। এরা বিশ্বের সব ডাটা শোষে নিয়ে আসছে নানা কায়দায়।
তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে, সবখানে আছে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি; কিন্তু কোথাও নেই বিজয়। আর ট্রাম্পের ঘাড়ে আছে এই অপমানজনক বোঝা। তবু হুঁশ নেই ট্রাম্পের। আছে শুধু যুদ্ধোন্মাদনা। সে জন্য এখন বলছেন, উত্তর কোরিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া ও ইরানে হামলা চালানোর কথা। আমেরিকার জনগণের সাথে এ এক বড় ধরনের প্রতারণা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস