আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গাদ্দাফি আসন্ন পার্লামেন্টারি ও প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। সাইফ আল-ইসলাম গাদ্দাফিসহ সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের সমর্থকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা গাসান সালামি।
গাসান সালামি বলেন, অবশ্যই সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি গড়ার হাতয়ার বানানোর পক্ষপাতি আমি না। আমি মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে ও সমর্থকদের সবাইকেই স্বাগত জানাই। ইসলামপন্থীরা বর্তমান আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন।তারাও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথেও যুক্ত থাকবেন। দলীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
গাসান সালমী জুলাই থেকে লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক উত্তোরণে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মতৎপরতা শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি সাধারণ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নযোগ্য কিছু পদক্ষেপসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছেন। তিনি আশা করছেন দ্রুতই নির্বাচনের উপযোগি পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের জানা উচিৎ কীভাবে একজন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করা যায় এবং তাকে কী ধরণের দায়িত্ব দেয়া হবে।
বিদেশী রাষ্ট্রের অঘোষিত কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ অফিস। যেকোনো ধরণের তৎপরতা জাতিসংঘের অধীনেই সংঘটিত হতে হবে।
লিবিয়ার অনেকেই জাতিসংঘের সাইফ আল ইসলাম এর নির্বাচনে অংশগ্রহণের বার্তাকে ভালোভাবে নেয়নি। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, আমরা স্বাগত জানাব সাবেক ক্ষমতাসীনদের সমর্থক ও কর্মীদের কিন্তু সাইফ আল গাদ্দাফিকে নয়, কারণ তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিস্তার চায়।
জানা যায়, সাইফ আল ইসলাম ৬ বছর ধরে বন্দি ছিলেন আবু বকর আল সিদ্দিক ব্যাটালিয়ন নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অধীনে। তারাই ঘোষণা দিয়ে সাধারণ ক্ষমার অধীনে মুক্তি দিয়েছে। অন্তবর্তী সরকারের আহ্বানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানায়। সাইফ আল ইসলাম তার পিতা, লিবিয়ার লৌহমানবখ্যাত মুয়াম্মার গাদ্দাফির দ্বিতীয় ছেলে। তিনি ছিলেন তার পিতার যোগ্য উত্তরসুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে লিবিয়ায় আগ্রাসন চালানোর পর ক্ষমতাচ্যুত হন তার পিতা গাদ্দাফি। তিনি রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যান। একই দশা হয় সন্তানদেরও। পরে গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালের নভেম্বরে পালিয়ে নাইজারে যাওয়ার সময় এক মরুভূমির ভিতর বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন সাইফ আল ইসলাম। পরে দেখা যায় তার বেশ কয়েকটি আঙ্গুল নেই। ধরে নেয়া হয় যে, তাকে আটক করার পর আঙ্গুলগুলো কেটে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমাদের চোখে তিনি ছিলেন লিবিয়ার প্লেবয়। তাকে দেখা হতো মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের চালিকাশক্তি হিসেবে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনিই হতে যাচ্ছিলেন পিতার শাসনযন্ত্রের উত্তরসুরি। তার পিতার বিরুদ্ধে যখন বিদ্রোহ শুরু হয় তখন তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
সাইফ আল ইসলামের বয়স ৪৪ বছর। ২০০৮ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে তিনি পিএইচডি অর্জন করেছেন বলে জানা যায়। ২০০০ সালের পর পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সাইফ মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। ধরা পড়ার চার বছর পরে তার বিরুদ্ধে ত্রিপোলির এক আদালত তার অনুপস্থিতিতেই ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যার রায় দেয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস