সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৫৮:৩৬

বড় ধাক্কা মমতা ব্যানার্জীর, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির গন্তব্যে মমতার ‘ছায়াসঙ্গী'

বড় ধাক্কা মমতা ব্যানার্জীর, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির গন্তব্যে মমতার ‘ছায়াসঙ্গী'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ও ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আজ তার দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি পদত্যাগ করছেন পার্লামেন্টের সদস্যপদ থেকেও।

তাকে এক সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সবচেয়ে আস্থাভাজন বলে মনে করা হত, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার জন্যও অনেকে মুকুল রায়কেই কৃতিত্ব দেন।

তবে গত বেশ কিছুদিন ধরেই শাসক দল বিজেপির সঙ্গে মাখামাখির অভিযোগে দলের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ছিল, আজ সেই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হল। সাথে সাথে কলকাতা এবং দিল্লির রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো শুরু হয়েছে মুকুল রায় হয়ো বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।

তবে মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদানের ব্যাপারে এখনও কোনও প্রস্তাব নেই বলেই দলটি দাবি করেছে। প্রায় বিশ বছর আগে মমতা ব্যানার্জি যখন কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল দলটি গঠন করেন, সেই তখন থেকেই মুকুল রায় ছিলেন কার্যত তার রাজনৈতিক সচিব, ছায়াসঙ্গী ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর।

এমন কী, মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে তার ছেড়ে আসা রেলমন্ত্রীর পদেও বেছে নিয়েছিলেন তার এই প্রিয়পাত্রকেই - আর দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাসভবনই ছিল তৃণমূলের কার্যালয় তথা রাজধানীতে মমতা ব্যানার্জির ঠিকানা।

সেই মুকুল রায়ই এদিন কলকাতায় তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সঙ্গে তিনি সব সম্পর্ক ত্যাগ করছেন। তিনি জানান, "১৯৯৭-র ১৭ ডিসেম্বর তৃণমূলের জন্মলগ্নে আমি ছিলাম প্রথম স্বাক্ষরকারী। কিন্তু আজ আমি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ থেকে ই-মেইল পাঠিয়ে ইস্তফা দিচ্ছি। রাজ্যসভায় দলের প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলাম - তার মেয়াদের এখনও আট মাসের মতো বাকি - পুজোর পর তা থেকেও ইস্তফা দিয়ে দেব।"

এদিকে, মুকুল রায় যখন তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে ঘোষণা করলেন ঠিক সেই সময়েই দিল্লীতে অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপীর জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক চলছিল। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সমস্ত রাজ্যের সভাপতি ও কর্মসমিতির নেতারা।

সেই সময় সাংবাদিকরা মুকুল রায় সম্মন্ধে দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করলে তিনি একটি ইঙ্গিতবাহি মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন "পঞ্চমী তে শুরু হলো, এটা ভাঙ্গনের সবে শুরু।

আজ মুকুল রায়ের সাথে সাথেই দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন মুকুল ঘনিষ্ঠ শ্রী বিপ্লব মন্ডল। হয়তো এটাই দিলীপ বাবুর ইঙ্গিত।

প্রাথমিকভাবে মুকুলের তৃণমূল ছাড়ার খবরে বিজেপি যে খুশি, তা দলের কথাতেই ধরা পড়ছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা যেমন জানিয়ে দিলেন, মুকুলের তৃণমূল ছাড়া বিজেপির জন্য অবশ্যই ভাল। কারণ, তার মতে তৃণমূল যত ভাঙবে, বিজেপি তত এগোবে।

তবে বিজেপিতে মুকুল রায় আসবে কি না, তা মুকুলের ব্যক্তিগত বিষয় বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। তবে মুকুলের তরফে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য কোনও প্রস্তাব আসেনি তিনি জানান। যদিও রাহুল সিনহার কথায়, মুকুল রায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। ফলে তার দল ছাড়া অবশ্যই তৃণমূলের কাছে ধাক্কা। তবে কতটা ধাক্কা তা আগমি দিনে বোঝা যাবে বলেই রাহুল সিনহার।

তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে মুকুল রায়ের কার্যকলাপের ভিত্তিতে তাকে শো-কজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি দলকে দিলেন না। বরং নিজেই দল ছেড়ে দিলেন।

অন্যদিকে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের দাবি, ব্যক্তিগত সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই তৃণমূল ছাড়লেন মুকুল রায়। ধনেখালির বিধায়কের ব্যাখ্যা, একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মুকুল রায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে জবাবদিহি করেছেন।

তিনি তদন্তাকারীদের কাছে অনেক তথ্যও ফাঁস করেছেন বলে শোনা গিয়েছে। তাই মুকুল এমন একটি পদক্ষেপ করেছেন বলে তার দাবি। তবে তৃণমূল ছাড়লে মুকুল রায় কি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আব্দুল মান্নান।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে