সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:১০:৫৬

পাকিস্তানে ভয়াবহ দুর্দশা ও দুর্ভোগের মধ্যে রোহিঙ্গারা

পাকিস্তানে ভয়াবহ দুর্দশা ও দুর্ভোগের মধ্যে রোহিঙ্গারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান সরকার ও ইসলামি দলগুলো রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচারের তীব্র সমালোচনা করেছে৷ কিন্তু পাকিস্তান তাদের দেশের রোহিঙ্গাদের সাথে ঠিক কী ধরনের ব্যবহার করছে? এই রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছে৷

করাচির আরাকানাবাদ এলাকায় থাকেন রোহিঙ্গা মুফিজুর রেহমান৷ তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা হলেও বাংলায় কথা বলতে পারেন তিনি, এ কারণে স্থানীয়রা তাকে বাঙালি বলেই মনে করে৷ ‘তারা আমাকে পাকিস্তানি হিসেবে মেনে নেয় না৷’ জানালেন মুফিজুর৷

আরাকানাবাদের নাম হয়েছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নাম অনুসারে, যা বর্তমানে রাখাইন রাজ্য নামে পরিচিত৷ গত মাসের শেষের দিকে সেখানে সেনা অভিযানের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা৷

মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবেও রোহিঙ্গারা বসবাস করছেন৷ পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আড়াই লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর পর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে তাদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তাতে এই প্রতিবাদ এক ধরনের ভণ্ডামি ছাড়া যেন কিছুই নয়!

নাসির আহমেদ আর একজন রোহিঙ্গা, যিনি আরাকানাবাদ বস্তিতে থাকেন৷ তিনি জানালেন, ‘আমরা বস্তিতে থাকি৷ এখানে জীবনযাপন ভয়াবহ৷’ একজন মানুষের যেসব মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তা এখানে নেই৷ আরাকানাবাদে নেই কোনো হাসপাতাল৷ ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন তারা, ছোট ছোট বাড়িতে অনেক মানুষ একসাথে থাকতে হয়৷ একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে মুফিজুর রেহমান আরো ২০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে থাকেন৷

বার্মিজ মুসলিম কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নূর হুসাইন আরকানি জানালেন, আরাকানাবাদেই অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার বাস৷ এদের বেশিরভাগই জেলে, কেউ কেউ পোশাক কারখানায় কাজ করে৷ মুফিজুর জানালেন, ‘আমি কখনো মিয়ানমারে ছিলামই না৷ আমার বাবা মিয়ানমার থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন৷ কিন্তু আমি টেলিভিশনে দেখেছি মিয়ানমারে কী ঘটছে৷’

অপর একজন রোহিঙ্গা রহমত আলীর বয়স ৭৫ বছর৷ ৭০ এর দশকে তিনি মিয়ানমার থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন৷ তিনি জানালেন এখনকার পরিস্থিতি সেসময়ের চেয়ে ভয়ংকর৷ তবে এও বললেন পাকিস্তানে থাকাটাও অনেক কষ্টকর৷

জানালেন, ‘আমি রাখাইনে থাকতাম, গণহত্যা শুরু হলে ৭০ এর দশকের শুরুতেই বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে আসি৷ আমার এক মেয়ে জোহরা খাতুন এখনও ঢাকায় থাকে৷ আমি পাকিস্তানে আছি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, কিন্তু পাকিস্তান আমাকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেয়নি৷ পাকিস্তানিদের কাছে আমরা বাঙালি এবং শরণার্থী৷’

তার মতো আরও অনেক রোহিঙ্গা জানালেন যে পাকিস্তানে সরকারি চাকুরিতে আবেদন করার অনুমতিও তাদের নেই৷ এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় না তাদের৷ করাচির এক রিকশাওয়ালাকে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি  বলেন, ‘পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের কোনো স্থান নেই৷ তারা ভারতের গুপ্তচর৷ আমাদের দেশ থেকে তাদের বের করে দেয়া উচিত৷ কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে সঠিক আচরণই করছে৷ তারা তো পাকিস্তানি না৷’ সূত্র  : ডয়চে ভেলে

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে