আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন সরকার উত্তর কোরিয়ার প্রধান কয়েকটি ব্যাংক এবং ২৬ জন নির্বাহীর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। উত্তর কোরিয়া যখন একের পর এক পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছ এবং আমেরিকা যখন কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে তখন এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এর এক খবরে এ কথা জানানো হয়েছে। এদিকে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর এক খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন নুচিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, উত্তর কোরিয়াকে পুরোপুরি একঘরে করে ফেলা এবং কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার যেসব নির্বাহীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তারা চীন, রাশিয়া, লিবিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে উত্তর কোরিয়ার ব্যাংকিং খাতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত এসব ব্যক্তির সম্ভাব্য সম্পদ জব্দ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে তাদেরকে বের করে দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, যেসব ব্যাংক এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ফরেইন ট্রেড ব্যাংক এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংক উত্তর কোরিয়ার সমরাস্ত্র তৈরিতে আর্থিক যোগান দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করছে ওয়াশিংটন।
এর আগে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে লিপ্ত যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মার্কিন অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া, উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত জাহাজ চলাচল ও বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ককে টার্গেট করেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
উ. কোরিয়া সম্প্রতি দাবি করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে সামরিক ব্যবস্থা প্রথম পছন্দ নয় । তবে যেকোনো সামরিক সামরিক ব্যবস্থাই পিয়ংই্য়ংয়ের জন্য ‘বিধ্বংসী’ হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি।
চলতি মাসে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করে এক প্রকার গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছেন কিম জং-উন। জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে পরোয়া না করে পর পর দুইবার জাপানের ওপর দিয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে তারা। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতিসংঘে দেওয়া প্রথম ভাষণে কিমকে 'শেষ হুঁশিয়ারি' দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ধ্বংস করার হুমকির পরিপ্রক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে এবার প্রশান্ত মহাসাগরে হাইড্রোজেন বোমা ফাটানোর ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এবার তাদের পদক্ষেপ ইতিহাসে লেখা থাকবে। উত্তর কোরিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে তাতে দমে যায়নি উত্তর কোরিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি অং-হো জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে প্রশান্ত মহাসাগরে আরও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করা হবে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, উত্তর কোরিয়া’র ষষ্ঠ পরমাণু বিস্ফোরণের মাত্রা গত পরীক্ষার চেয়ে ৯ দশমিক ৮ গুণ বেশি। উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ড থেকে প্রবল কম্পন ছড়িয়ে পড়তেই শঙ্কিত হয় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস