সোমবার, ০২ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:৫৪:৫৮

নতুন মেরুকরণ

নতুন মেরুকরণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ায় অব্যাহত রুশ-চীন প্রভাব মোকাবেলায় দুর্বল হয়ে পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ ভারতও বেশ চাপের মুখে পড়েছে। আফগানিস্থানে সেনা পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ভারত। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্থানে ভারতের ভ‚মিকা বাড়ানোর প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় ভারত যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরÿামন্ত্রী যখন দিলিøতে এসে এই প্রস্তাবে তোলেন, তখন পিছিয়ে যায় ভারত। প্রকৃতপÿে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতা দÿিণ এশিয়ায় কৌশলগত সম্পর্কের ধারা বদলে যাচ্ছে। ভারত সীমান্তের দু’পাশের শক্তিশালী দেশ চীন ও পাকিস্থানের দিক থেকে হুমকির পাশাপাশি একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার সাথে একধরনের শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরÿামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস চলতি সপ্তাহে যখন আফগানি¯Íানে ভারতীয় সেনা পাঠানোর জন্য আলোচনা করছেন, তখন পাকি¯Íান ও রাশিয়ার সেনাবাহিনী দুই সপ্তাহব্যাপী যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এর আগে গত বছর রাশিয়ার সেনারা যখন পাকি¯Íানে সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে আসে তখন ভারত তার সমালোচনা করেছিল। রাশিয়া যাতে পাকি¯Íানের সাথে সামরিক সম্পর্ক না বাড়ায় সে জন্য নানা দেনদরবার করেছিল। পাকি¯Íান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, রাশিয়ার মিনরালনেই ভডিতে এই যৌথ মহড়া শুরু হয়েছে। ড্রজুবা ২০১৭ নামে এই যৌথ মহড়া কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও পাকি¯Íানের ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এই যৌথ মহড়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উভয় দেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে পাকি¯Íান সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়। এই যৌথ মহড়ায় সন্ত্রাস দমন অভিযান, জিম্মি পরিস্থিতি ও উদ্ধার, ঘেরাও এবং তলøাশি অভিযান গুরুত্ব পাবে।

কয়েক বছর ধরে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে। আফগানি¯Íান ইস্যুতে পাকি¯Íান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অবনতির দিকে যাওয়ার পর ইসলামাবাদ মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ায় নতুন আঞ্চলিক মেরুকরণ ঘটছে। রাশিয়া এখন পাকি¯Íানের সমরাস্ত্রের অন্যতম বাজার। চলতি বছরের আগস্ট মাসে রাশিয়া চারটি এমআই-৩৫ গানশিপ হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে পাকি¯Íানকে। ১৫৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে এই হেলিকপ্টার পেয়েছে পাকি¯Íান। এ ছাড়া পাকি¯Íান রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ পেণাস্ত্র প্রতিরা ব্যবস্থা কিনতে আগ্রহী। ২০১৪ সালে ইসলামাবাদের ওপর থেকে দীর্ঘ দিনের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাশিয়া। ১৯৭৯ সালে আফগানি¯Íানে সোভিয়েত অভিযানের সময় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাশিয়া।

আফগানি¯Íান থেকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো যখন সেনা প্রত্যাহার করছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সেনা পাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। ভারতও দীর্ঘ দিন থেকে আফগানি¯Íানে সামরিক উপস্থিতির স্বপ্ন দেখত। কিন্তু নতুন মেরুকরণে ভারতকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। ভারতের প্রতিরামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, মার্কিন প্রশাসনের সরাসরি অনুরোধ সত্তে¡ও ভারত এখনই আফগানি¯Íানে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত নয়। দিলিøতে মার্কিন প্রতিরামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের সাথে বৈঠকের পর তিনি বলেন, অন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও ‘আফগানি¯Íানের মাটিতে ভারতীয় সেনাদের পা পড়বে না।’

অবশ্য রুশ-পাকি¯Íান সামরিক মহড়ার আগে পাকি¯Íানের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন আফগানি¯Íানে তারা ভারতকে কোনো ভ‚মিকাতেই দেখতে চায় নাÑ কিন্তু মার্কিন প্রতিরÿামন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর দিলিø জানিয়ে দেয় কোনো সামরিক হ¯Íÿেপে না জড়ালেও কাবুলের ওপর তাদের প্রভাব বি¯Íারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গত মাসে যখন ভারতকে আফগানি¯Íারে আরো সক্রিয় ভ‚মিকা নেয়ার আহŸান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নতুন নীতি ঘোষণা করছিলেন, তখন থেকেই পাকি¯Íান ও ভারতের মধ্যে এ নিয়ে অস্ব¯িÍ সৃষ্টি হয়। গত সপ্তাহেই পাকি¯Íানের প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি নিউ ইয়র্কে বলেন, আফগানি¯Íানে ভারতের রোল হওয়া উচিত ‘জিরো’।

দিলিøতে ভারতের প্রতিরÿামন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর জেমস ম্যাটিস বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে দেয়া যাবে নাÑ এ নিয়ে সারা বিশ্ব একমত। আর সে ল্েযই আমরা ভারতের সাথে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় বহু দেশই এখন তাদের সেনাদের বিদেশে পাঠাচ্ছে, পুলিশবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছেÑ সহযোগিতার পরিসর ক্রমেই বাড়ছে।’ তিনি যে ভারতীয় সেনাদের আফগানি¯Íানে দেখতে চানÑ সেটা বোঝাতে বস্তুত ম্যাটিস কোনো লুকোছাপা করেননি।

কিন্তু ভারত ম্যাটিসের আহŸানে তো সাড়া দেয়নি, বরং পিছিয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো আফগানি¯Íানে সামরিক প্রভাব বি¯Íারের এমন সুযোগ কেন ভারত হাতছাড়া করল। অনেক বিশেøষক মনে করেন, ভারত নিজ দেশে যে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে তাতে বিদেশের মাটিতে নতুন কোনো ফ্রন্ট খুলতে চায় না। কাশ্মির ও অরুণাচল সীমান্ত নিয়ে চীন ও পাকি¯Íানের সামরিক হুমকির মুখে আছে ভারত। এখন আফগানি¯Íানে যদি সেনা পাঠানো হয় তাহলে ভারতীয় সেনারা যে সেখানে বড় ধরনের হামলার ঝুঁকির মুখে থাকবে তা বোঝা খুব কঠিন ব্যাপার নয়। এ ছাড়া ভারতের সেনাদের অন্য কোনো দেশে সামরিক অভিযানে সাফল্য পাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে ভারত সেনা পাঠালেও তার অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। এসব দেশের চেয়ে আফগানি¯Íানের পরিস্থিতি আরো জটিল। দেশটিতে ভারতের স্বার্থ যতই থাক না কেন, সেনা পাঠানোর মতো ঝুঁকি ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেবে না। ভারতের জন্য এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে চীন-রাশিয়া-পাকি¯Íান অÿ। রাশিয়াকে পাকি¯Íান থেকে দূরে রাখার জন্য ভারত নানা প্রচেষ্টা চালালেও তাতে সফল হয়নি। বরং ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার সাথে ভারতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা ভারতকে জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না তা নিয়ে ভারতের ভেতরে প্রশ্ন উঠেছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে