আমি তালিবান, আর আমি রাক্ষস নই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভিড়ে ঠাসা বাস ঠিক মত দাড়ানোর জায়গা পূর্যন্ত নেই। যাত্রীদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কারন দরজার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক তালিবান জঙ্গি! মুখে কালো কাপড় বাঁধা, আর ঘাড়ে পেল্লায় রাইফেল।
ঘাড় থেকে রাইফেলটা নামল ঠিকই। তবে গুলিবর্ষণের জন্য নয়। পায়ের কাছে রাইফেলটা ফেলে নরম গলায় যাত্রীদের সুদিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সে। নানা আশ্বাস, প্রতিশ্রুতির কথা শোনাচ্ছিল। অক্টোবরের শেষে ফেসবুক সহ সকল সোশ্যাল সাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এমনই একটি ভিডিও ক্লিপ। ভিডিওটি রেকর্ড করেছিলেন বাসেরই এক যাত্রী। বছর তেইশের সাহসী সেই তরুণী এখন তারকা। আসল নাম প্রকাশ করেননি ঠিকই। তবে পরিচিতি পেয়েছেন ফতিমা হিসেবে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মীদের ভিড় জমছে তাঁর কাবুলের বাড়িতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি আপলোড করার পরিণতি আন্দাজ করতে পেরে প্রথম ক’টা দিন বেশ আতঙ্কে ছিলেন ফতিমা। তবে এখন আর সে ভয় পাচ্ছেন না। হাসিমুখে বলছিলেন, ‘‘ভিডিওটি তালিবানের নজরে এসেছে কি না জানি না, তবে এখনও আমি ও আমার পরিবার অক্ষত।’’
মনস্তত্ত্ববিদ ফতিমা বর্তমানে কাবুলে থাকেন। তবে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে ইরানের শরণার্থী শিবিরে। তখন আফগানিস্তানে তালিবানের প্রবল দাপট। ২০০১-য় দেশে তালিবান জমানার অবসান হলে সপরিবার ফিরে আসেন। বছরের বেশির ভাগ সময়টা কাবুলে কাটলেও পেশার খাতিরে মাঝেসাজে তাঁকে বাইরে যেতে হয়।
অক্টোবরে উত্তরের শহর মাজার-ই-শরিফের শিবির শেষ করে ফিরছিলেন কাবুলের বাড়ি। মাঝরাস্তায় বাঘলান প্রদেশে তালিবান চেকপোস্টের কাছে ফতিমাদের বাসটি দাঁড় করায় এক জঙ্গি। কালো পোশাকের সশস্ত্র জঙ্গিকে বাসে উঠতে দেখেই সমঝে যান যাত্রীরা। ফতিমার বিবরণ অনুযায়ী, বাস থামিয়ে পালাতে যাচ্ছিলেন চালক। আটকে দেয় জঙ্গিরা। বাস চালিয়ে যেতে বলে। কৌতূহল চেপে রাখতে পারেননি ফতিমা। মোবাইল বের করে ঘটনাটা রেকর্ড করতে থাকেন। নজর এড়াতে মোবাইলটি হাত দিয়ে যতটা সম্ভব লুকিয়ে রেখেছিলেন। মিনিট ছয়েকের ওই ভিডিও ক্লিপে তরুণীর আঙুলও তাই উঁকি মেরেছে কয়েকবার।
আফগানিস্তানের জাতীয় ভাষা দারি এবং পাস্তুতে কথা বলতে দেখা গিয়েছে ওই জঙ্গিকে। যাত্রীদের সে বলছিল, ‘‘দেশের শান্তি আপনাদের উপর নির্ভর করছে।’’ বাসে সরকারের কোনও কর্মী আছে কি না জেনে নিয়ে বলছিল, ‘‘আধিকারিক বা সেনা যাই হোন, অনুরোধ করছি পদত্যাগ করুন।’’ যাত্রীদের আতঙ্কিত দেখে জঙ্গিটিই তাদের ভয় না পেতে অনুরোধ করে। আমেরিকার প্রতি রাগ উগরে দিচ্ছিল আর বলছিল, ‘‘কেউ কেউ তালিবানকে রাক্ষস ভাবে। আমি বলছি আমি তালিবান। আর আমি রাক্ষস নই। তবে এটাও বলছি, মার্কিনদের মুণ্ডু খেতে পারি।’’
কিছুটা পথ গিয়ে বাস থেকে নেমে যায় জঙ্গি। সুইচ অফ করে মোবাইল ব্যাগে পুরে নেন তরুণী। তাঁর ছোটবেলার অভিজ্ঞতা বলে, তালিবান মানেই আত্মঘাতী হামলা। বাঘলান প্রদেশের কাছে বাসে জঙ্গি ওঠায় প্রাণে বাঁচার আশা তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে বাড়ি ফিরলেন অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। কাবুলে পৌঁছে মোবাইলে রেকর্ড করা ভিডিওটি বন্ধু-বান্ধবদেরও দেখান। বন্ধুদের উৎসাহেই তিন দিন পর ভিডিওটি আপলোড করেন ফেসবুকে। সঙ্গে সঙ্গে লাইক, কমেন্টে ছেয়ে যায় তাঁর ফেসবুকের ওয়াল। প্রশ্ন ওঠে, তালিবান কি তবে হিংসার পথ ছাড়ল?
জবাবে নির্লিপ্ত ফতিমা নিজেই। সেপ্টেম্বরের শেষে কুন্দুজ হামলার প্রসঙ্গ তুলে বলছিলেন, ‘‘কথায় এবং কাজে বিস্তর ফারাক থাকে।’’ ফতিমার বিশ্বাস, শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না তালিবান। তাই এ ভাবে সাধারণের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রমাণ করতে চাইছে ক্ষমতায় এলে প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানির থেকে যোগ্য প্রশাসক হবে।
৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ
�