নিউটন এন মিনো: প্রিয় (সাবেক) প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা,
আপনাদের প্রত্যেকের সাথে এবং আপনাদের প্রশাসনের সাথে কাজ করার এবং আপনাদেরকে জানার সুযোগ পেয়েছি। আপনারা সবাই কত গভীরভাবে আমাদের দেশকে (আমেরিকা) ভালোবাসেন তা আমি জানি। আপনাদের পাঁচজনকে পেয়ে এবং ওভাল অফিসে আপনাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও মোট ৩২ বছর পারমাণবিক কোডে আপনাদের অবিচলিত হাতের সেবা পেয়ে আমাদের জাতি মহিমান্বিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশকে সহায়তা করতে এই অনন্য সম্পদ ব্যবহারের সময় এসেছে।
আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক এখন জীবনের কিছু সময়ের প্রতি খুব কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে ২৪/৭-এ খবরটি এসেছে। এক সঙ্কটের পর অবিলম্বে আরেক সমস্যা এসে উপস্থিত হচ্ছে। এমনকি এক মাস আগে কী ঘটেছিল তাও আমরা ভুলে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত কী ঘটেছে, তা আমাদের নিজেদের আবার স্মরণ করা প্রয়োজন।
* স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, কোনো কৌশলগত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য না থাকার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য বিদেশী নেতৃবৃন্দের কাছে প্রকাশ করে দিচ্ছেন। * নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার ব্যবসায় পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ না করে তিনি নৈতিকতার নীতিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বা অগ্রাহ্য করছেন।
* তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, নাৎসি এবং ক্লু ক্লাক্স ক্লান প্রতিবাদকারীদের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
* তিনি জনগণকে বর্ণগতভাবে চিত্রিত করা বন্ধ করার ব্যাপারে আদালতের একটি সরাসরি নির্দেশকে অমান্য করে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া আরিজোনার সাবেক শেরিফ জোই এরপায়োকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
* তিনি তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার ব্যাপারে তদন্তে নিয়োজিত এফবিআইর পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্ত করে থাকেন।
* তিনি তার সাথে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জানানো বিচারক, বিজ্ঞানী, নিউজ মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম এবং যেকোনো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান।
* তিনি বিদেশে আমেরিকার মিত্রদের অপমানিত করে থাকেন। আবার তার নিজের দলের নেতৃত্বকেও তিনি অপমানিত করেন।
এসব ঘটনার পর প্রেসিডেন্টের স্থায়িত্ব বা তার প্রেসিডেন্ট পদে অটল থাকার ব্যাপারে দু’টি অতিশয় বেদনাদায়ক এবং ভীতিকর বা শঙ্কাপূর্ণ হুঁশিয়ারি এসেছে। প্রথম হুঁশিয়ারটি এসেছে টেনেশির একজন রিপাবলিকানের কাছে থেকে। তিনি হলেন পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট এই জাতির চরিত্র বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারার বিষয়টি দেখাতে পারেননি।’ ‘এখনো তার পদে অবিচল থাকার মতো সামর্থ্য বা যোগ্যতা দেখাতে পারেননি’।
‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় কিছু যোগ্যতা এখনো তিনি দেখাতে পারেননি’।
দ্বিতীয়ত, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের সাবেক পরিচালক জেমস ক্লেপার জুনিয়র বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট অফিসের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার যোগ্যতা আছে কি না কিংবা তিনি এ জন্য কতটুকু সামর্থ্য রাখেন, সে ব্যাপারে আমার প্রশ্ন আছে। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার মোটিভেশন বা প্রেষণার ব্যাপারেও আমি বিস্মিত।’
এসব রেড সিগন্যাল বর্তমান প্রেসিডেন্টের এই পদে প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। পত্রপত্রিকার খবরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার লোকেরা ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তারা আমেরিকার সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমেরিকার নীতির ব্যাখ্যা চাচ্ছেন। সন্দেহ, সংশয়, ভুল হিসাব-নিকাশ বা ভুল ধারণা এবং যোগাযোগের ব্যর্থতার কারণে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
লাখ লাখ আমেরিকান তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলছেন এবং কী ঘটতে পারে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। কিন্তু আমাদের দেশ ও জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে কোনো গুরুতর পাবলিক পরীক্ষা অব্যাহত নেই। তাই আমি মনে করি, আপনারা পাঁচজন একত্রে কাজ করতে পারেন এবং আমাদের দেশ যে নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আপনাদেরকে অবশ্যই সেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আপনাদের কেউ কেউ ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
কিন্তু আপনারা দু’টি বিরোধী গ্রুপ একত্রে কথা বললে তার বিরাট প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের সংবিধান যখন প্রণয়ন করা হয়েছিল ফিলাডেলফিয়ার এক ব্যক্তি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন : ‘আপনি আমাদের কী দিয়েছেন- রাজতন্ত্র না প্রজাতন্ত্র?’ তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘একটি প্রজাতন্ত্র’ যদি আপনারা রক্ষা করতে পারেন’।
আমেরিকানরা তাদের প্রজাতন্ত্রী সংবিধান এবং জীবনপদ্ধতিকে রক্ষা করতে চায়। সারা বিশ্বের মানুষ নেতৃত্বের কারণে আমাদের দেশের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামীতে কী ঘটবে, সে জন্য এখন সবাই উদ্বিগ্ন। আপনাদের প্রজ্ঞা, আপনাদের সাহস এবং আপনাদের দেশপ্রেমকে সমন্বিত করার আহ্বান জানাই। আপনারা বর্তমানে অবক্ষয় বা সীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একত্রে কথা বলতে এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধকে নিশ্চিত করতে পারেন। পরবর্তী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যাপারে আপনারা জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে এবং আমাদের মূল্যবোধের স্বার্থে আমরা এখন আপনাদের কণ্ঠস্বরকে উচ্চকিত দেখতে চাই।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস