বুধবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৩:১৪:১৭

প্রিন্স আবদুল আজিজ নিহতের ঘটনা অস্বীকার করলো রিয়াদ

প্রিন্স আবদুল আজিজ নিহতের ঘটনা অস্বীকার করলো রিয়াদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের প্রিন্স আবদুল আজিজ গ্রেফতার এড়াতে গিয়ে সোমবার রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে তুরস্কের ডেইলি সাবাহসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় যে খবর বেরিয়েছে তা অস্বীকার করেছে রিয়াদ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তিনি জীবিত আছেন এবং সুস্থ আছেন।

নিহত এই প্রিন্স মরহুম বাদশাহ ফাহদের ছেলে আবদুল আজিজ বলে জানানো হয়েছে। তার বয়স ৪৪ বছর।

এএফপির খবরে প্রকাশ, সৌদির তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ‍মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আবদুল আজিজের মৃত্যুর যে খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘প্রিন্স আবদুল আজিজ জীবিত আছেন এবং ভালো আছেন।’

তবে কোনো সূত্র থেকেই আবদুল আজিজের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।

গত শনিবার রাতে সৌদি বাদশাহ এক ফরমান জারি করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরপরই গ্রেফতার করা হয় ১১ প্রিন্স, ৪ বর্তমান মন্ত্রী ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ধনকুবের প্রিন্স ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন।

অভিযান শুরু হওয়ার পর সাবেক প্রিন্স মুকরিন আলে সউদের ছেলে মানসুর বিন মুকরিন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আর তার কয়েক ঘণ্টা পর প্রিন্স আবদুল আজিজ নিহত হওয়ার খবর বের হয়।

সৌদি রাজকীয় আদালতের বরাত দিয়ে আল-ইতিহাদ নিউজ লেটার জানায়, আবদুল আজিজের মৃত্যুতে রাজপরিবারে শোক চলছে তবে তিনি কেন মারা গেছেন তা জানানো হয়নি। বলা হয়, গত রোববার তাকে আটক করা হয়েছিল।

আবদুল আজিজের আটকের পরপরই বন্দুকযুদ্ধের খবর বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া যায়। এসব রিপোর্টে বলা হয়েছে, আবদুল আজিজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সবার আগে আল-মাসদার নিউজ নেটওয়ার্ক তার নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল এবং কিছুক্ষণ পরই সে খবর প্রত্যাহার করে নেয়।

এক টুইটার বার্তায় জানানো হয়েছে, আবদুল আজিজ নিশ্চিতভাব মারা গেছেন। তার বয়স ছিল ৪৪ বছর। সাবেক যুবরাজ মুকরিনের ছেলে মানসুরও নিহত হয়েছেন।

এদিকে, অন্য এক খবরে বলা হয়েছে- আটক করার সময় বাধা দিলে আবদুল আজিজকে গুলি করে মারা হয়। ‘দি দুরান’ নামের একটি ওয়েবসাইট আবদুল আজিজের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না করে বলেছে, ‘আটকের চেষ্টার সময় তিনি মারা যান।’

সৌদি ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের পদ থেকে প্রিন্স মিতআব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে খালেদ বিন আইয়াফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ বিন সুলতান বিন মোহাম্মদ আল সুলতানকে এবং অর্থমন্ত্রী আদেল আল ফাকিহসহ বেশ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আদেল আল ফাকিহকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-তোইজরিকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে সৌদি বাদশাহ এক ফরমান জারি করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশনে বলা হয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে চারজন বর্তমান ও বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর জেদ্দায় ২০০৯ সালের বন্যা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই তাদের আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালিত সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জানমালের সুরক্ষা প্রদান ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যুবরাজের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিরও মতা দেয়া হয়েছে। আলাদা আদেশে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সৌদি ন্যাশনাল গার্ড ও নৌবাহিনীর শীর্ষ পদেও পরিবর্তন এনেছেন বাদশাহ সালমান।

এর মধ্যে ন্যাশনাল গার্ডবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে প্রিন্স মিতআব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে খালেদ বিন আইয়াফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আদেল আল ফাকিহর বদলে এসেছেন ওই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোহাম্মদ আল তোইজরি। নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আবদল্লাহ বিন সুলতান বিন মোহাম্মদ আল সুলতানকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

সৌদি আরবের মরহুম সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ছেলে মিতআবকে এক সময় সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হতো। রাজপরিবারে আবদুল্লাহর বংশধরদের মধ্যে কেবল তিনিই সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন। প্রতিরামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা যুবরাজ মোহাম্মদ এই রদবদলের ফলে পুরো দেশের সব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ পেলেন।
সম্প্রতি রিয়াদে এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সৌদি আরবের আধুনিকায়নের েেত্র তার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র হবে ইসলামের উদারনীতিতে ফিরে আসা। চলতি বছর জুনে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সংস্কারমূলক পদপে নিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।

বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরবে আরো বেশি করে বিদেশী ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দেশটির যুবরাজ একটি উচ্চাকাক্সী অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদে এ রদবদল যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমানকে দেশটির নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করবে, যা দীর্ঘ দিন ধরে শাসক পরিবারের আলাদা আলাদা মতা শাখা থেকে পরিচালিত হতো।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে