শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:২৬:৫২

সৌদি আরব কী ইসরাইলি প্ররোচনায় আরেকটি যুদ্ধে জড়াচ্ছে

সৌদি আরব কী ইসরাইলি প্ররোচনায় আরেকটি যুদ্ধে জড়াচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের ভেতরে নিজের অবস্থান সংহত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধে আট হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ইয়েমেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইরানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটির ইরান নীতিতে যে পরিবর্তন আসে, তাতে মূল ভূমিকায় চলে আসে সৌদি আরব ও ইসরাইল।

এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আগে তিনি সৌদি আরব সফর করেন। ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম জ্যারেড কুশনার। ইতোমধ্যে ডেনাল্ড ট্রাম্প সৌদি রাজপরিবারে মোহাম্মদ বিন সালমানের সব তৎপরতাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং বলেছেন ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।

সৌদি-ইসরাইল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইয়েমেনের পর এখন দৃষ্টি দেয়া হয়েছে লেবাননের দিকে। দেশের ভেতরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আগের দিন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরিকে সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাদ হারিরি সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে তার বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। হঠাৎ করে সফররত সাদ আল হারিরি টেলিভিশনে ঘোষণা দেন তার জীবনের নিরাপত্তাশঙ্কা দেখা দেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছেন। আর তার এই জীবনের শঙ্কা আসছে হিজবুল্লাহ আর ইরানের দিক থেকে। সাদ হারিরির এই পদত্যাগের ব্যাপারে লেবাননের সরকার ও তার দলের নেতারা কিছুই জানতেন না।

লেবাননে যে ঐকমত্যের সরকার রয়েছে, তার অন্যতম অংশীদার ইরানপন্থী হিজবুল্লাহ। সাদ হারিরির পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই হিজবুল্লাহ-প্রধান হাসান নসরুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে কিডন্যাপ করে সৌদি আরব পদত্যাগে বাধ্য করেছে। লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে পদত্যাগ করার ঘটনাকে সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ইরান ও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে তার জীবনের ওপর ঝুঁকি আছে বলে ঘোষণা করা হলেও এ ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি ইরানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতির সাথে বৈঠক করেন। দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেন। এমনকি তিনি যখন লেবানন থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেন, তখন ছিলেন দুশ্চিন্তামুক্ত। বিমানবন্দরে কর্মীদের সাথে তিনি হাসিমুখে সেলফি তোলেন। কার্যত লেবাননে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য সৌদি আরব চাপ দিয়ে সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাদ হারিরর পদত্যাগের ঘোষণার সময়ই সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইয়েমেনের হাউচি বিদ্রোহীরা রিয়াদ বিমানবন্দর লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইরান হাউচি বিদ্রোহীদের কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকে ইরানের সাথে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরব। লেবাননে হিজবুল্লাহকে কোণঠাসা করতে সৌদি পরিকল্পনায় আবার লেবাননে হামলা করতে পারে ইসরাইল। অর্থাৎ আরেকটি ইসরাইল-লেবানন যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে।

সাদ হারিরির পদত্যাগ নিয়ে লেবাননে অস্থিরতা সৃষ্টির মধ্যে খবর আসে সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদু রাব্বো মনসুর হাদি, তার পুত্র ও একাধিক মন্ত্রীকে রিয়াদে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। সৌদি সমর্থিত মনসুর হাদির সমর্থকেরা ইয়েমেনের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এডেন বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে তার মতভেদের কারণে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এডেন বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। এ ছাড়া হাদির দল আল ইসলাহ পার্টির সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সেকুলারদের ক্ষমতাসীন করার পরিকল্পনায় মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রধান পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করছেন জায়েদ।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লেবাননে হিজবুল্লাহকে যেমন কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সাথে হামাসকে মধ্যপ্রাচ্যর রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সৌদি-মিসরীয়- ইসরাইলি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হামাসকেও বাধ্য করা হয়েছে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার। ইতোমধ্যে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের বিপক্ষে স্বাধীন অবস্থান নেয়া কাতারও নিরাপত্তা সঙ্কটে রয়েছে। নিঃসন্দেহে সৌদি আরব ও ইসরাইলের প্রথম টার্গেট হচ্ছে লেবানন। একই সাথে কাতারের ওপর চাপ আসতে থাকবে।

কাতারের শাসক পরিবর্তনে সৌদি আরব একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। অপর দিকে বিন সালমানের বিরোধী প্রিন্সদের সাথে কাতারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি টার্গেট থেকে রক্ষা পেতে কাতার আরো বেশি তুরস্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

ইতোমধ্যে কাতারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে ঘাঁটি নির্মাণ ও সৈন্যসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কার্যত মোহাম্মদ বিন সালমানের নীতি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতিতে দ্রুত নানামাত্রিক মেরুকরণ ঘটছে।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে