নিউজ ডেস্ক : কঠোর বার্তা নিয়ে মিয়ানমার পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। রাজধানী নেপিদোয় পৌঁছার পর গতকাল তিনি সোজা চলে যান সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয়ের কাছে। পরে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় টিলারসন মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে নৃশংস ও ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে তার দৃশ্যগুলো ভয়ঙ্কর।’ তিনি এ সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার এবং এ নৃশংসতার ‘সঠিক তদন্ত’ করার আহ্বান জানান।
টিলারসন আরও বলেন, ‘কয়েক লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায়ও আমরা মর্মাহত।’ তবে রোহিঙ্গা সংকটে নীরব ভূমিকার কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন সুচি।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠার প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল এক দিনের এই সফরে যান। সামরিক দমন-পীড়নের কারণে গত আগস্টের শেষের দিক থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এখন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাচ্ছি না।’ তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারকে সফল দেখতে চাই। নিষেধাজ্ঞা কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করবে তা বুঝতেই অনেক সময় লেগেছে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভ্রমণরত যুক্তরাজ্যের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন, যাতে রোহিঙ্গারা আবার তাদের ঘরে ফিরতে পারে।
তবে টিলারসনের মিয়ানমার সফরের আগে দুজন সিনেটর দেশটির সেনাবাহিনী ও তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তার পরপরই টিলারসনের এই সফর। অবশ্য এর আগে মঙ্গলবার ফিলিপাইনে অং সান সুচির সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেন টিলারসন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তার সরকার কী কী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তার ব্যাখ্যা করেন সুচি।
একই সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চান তাদের বিষয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে তাও তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু টিলারসনের এই সফরের আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছুই করেনি বলে নিজস্ব রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
তাতে তাদের বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহানী, হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে সেনাবাহিনীর এই রিপোর্টকে হোয়াইটওয়াশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলো। এএফপি, বিবিসি।
এমটিনিউজ/এসবি