রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:০৪:৪১

মুসলিমরা মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি : বৌদ্ধভিক্ষু থা পারকা

মুসলিমরা মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি : বৌদ্ধভিক্ষু থা পারকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সারাবিশ্ব যখন রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতি নিধন নিয়ে ক্ষুব্ধ তখন এটাকে গণহত্যা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধ ভিক্ষু থা পারকা। এসময় তিনি বলেন মুসলিমরা মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের প্রধান হুমকি কি? তা হলো ইসলাম।

থা পারকা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) যা বলছে পরিস্থিতি আসলে তা নয়। এটা মোটেও কোনো গণহত্যা নয়। ইয়াঙ্গুনের ডাম্মারইয়োন মনাস্টেরি’র ভিক্ষু থা পারকা (৪৬) দেশটিতে শতাধিক ভিক্ষুর নেতৃত্ব দেন।

মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জাতীয় পর্যায়ের গ্রুপ মা বা থা অর্থাৎ দ্য এসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন-এর ভিক্ষুদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে এই মুসলিম বিরোধী অনুভূতিককে কাজে লাগিয়ে রাখাইনে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশ চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

তাদের ওপর চালানো হয়েছে সম্ভমহানী থেকে শুরু করে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ। তবে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতো সেদেশের সেনাবাহিনীও। তারা বলেছে, ২৫ শে আগস্ট পুলিশ পোস্টের ওপর যেসব রোহিঙ্গা উগ্রপন্থি হামলা চালিয়েছিল তাদেরকে টার্গেট করেছে তারা।

তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেতর অভিযোগ তাদের ওপর নির্বিচারে সম্ভমহানী, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর প্রমাণও পেয়েছে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। জাতিসংঘ রাখাইনে এই নৃশংসতাকে জাতি নিধন বলে আখ্যায়িত করেছে। এমন অভিযোগকে ‘উদ্ভট অভিযোগ’ বা ওয়াইল্ড একিউজেশনস বলে আখ্যায়িত করেছেন ভিক্ষু থা পারকা।

তিনি বিশ্বাস করেন, রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী বৌদ্ধরাই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার। তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতি ভাইরা সেখানে অনাহারে আছে। তারা তাদের গ্রাম ছেড়ে এসেছেন। যদি ওইসব গ্রামে তারা  (রোহিঙ্গারা) থাকে তাহলে সেখানে বসবাস করা অসম্ভব। মিয়ানমারের বেশির ভাগ বৌদ্ধ ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করে।

রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের কোনো সহানুভূতি নেই বললেই চলে। তাই আন্তর্জাতিক চাপের বিরুদ্ধে তারা আত্মরক্ষামুলক প্রতিক্রিয়া দেয়। তারা রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদেরকে ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে। এটাকে তারা অবমাননাকর অর্থে ব্যবহার করে। বোঝাতে চায়, এরা অবৈধ অভিবাসী। সম্প্রতি রাজপথে বৌদ্ধদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তাতে নারীদের দেখা গেছে হাতে ব্যানার, প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন।

তাতে লেখা রয়েছে, ‘আর কোনো রোহিঙ্গা নয়। তারা বাঙালি। আমরা রোহিঙ্গা শব্দের ব্যবহার করতে দেবো না। তারা আমাদের জাতীয়তার অংশ নন। তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে’। এই ব্যানারে যে লেখা তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের ক্ষোভ কি পর্যায়ে তা ফুটে উঠেছে। যতই সরকার বা সেনাবাহিনী বলুক মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনো বিরোধ নেই, এই একটি পোস্টারই তার জবাব দিয়ে দেয়।

তারা সদম্ভে ঘোষণা করছে, রোহিঙ্গা শব্দের ব্যবহার করতে দেবে না তারা। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী। বৌদ্ধরা একটি মাছিকেও আঘাত করে না এমন ধারণাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তারা কেন এত মানুষের ওপর এই নৃশংসতা চালাচ্ছে তাতে পশ্চিমাদের কাছে তাদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

এশিয়ার রাজনীতিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জড়িত হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তারা সম্প্রতি মিয়ানমার ও শ্রীলংকার মতো জায়গায় উগ্র জাতীয়তাবাদ ও উগ্রপন্থা বেছে নিয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে কিভাবে মুসলিম বা অন্য ধর্মীয় গ্রুপ হুমকি হতে পারে তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। -সূত্র : সিএনএন

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে