সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:১২:১৩

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচিকে অভয় দিলো চীন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচিকে অভয় দিলো চীন

নিউজ ডেস্ক : অং সান সুচিকে অভয় দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। আন্তর্জাতিক মহল যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচির সমালোচনায় মুখর, কেড়ে নিচ্ছে তাকে দেয়া পদ, পদবী বা পদক তখন তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি। বললেন, মিয়ানমারের পাশে আছে চীন।

শুক্রবার সুচিকে সি জিনপিং বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বেইজিং। মিয়ানমারের উন্নয়নমূলক সম্পর্ককে সঠিক পথে রেখে কাজ করতে আগ্রহী চীন। ওদিকে চীন ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

পশ্চিমারা যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করছে তখন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে চীন। তারা এই ফাঁকে শূন্যস্থান পূরণ করছে। পোপ ফ্রাসিসের সঙ্গে বৈঠকের পর গত সপ্তাহে চীন সফরে যান অং সান সুচি। তিনি যোগ দেন চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আয়োজনে এক রাজনৈতিক সম্মেলনে। এর আগে একটি মাস সুচির জন্য অস্বস্তিতে কেটেছে।

তাকে একের পর এক বৈঠকে বসতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, ষষ্ঠ পোপ ফ্রাসিসসহ পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ সময়েই কেড়ে নেয়া হয়েছে তাকে দেয়া ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড পুরস্কার। এরপর তিনি চীন সফরে গিয়ে দৃশ্যত স্বস্তি পেলেন, তার পিছনে শক্তি খুঁজে পেলেন। সুচির আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারে জাতি নিধনের কারিগর সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

এর প্রেক্ষিতে সি জিনপিং চীনের সঙ্গে তার দেশের সামরিক সম্পর্ককে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বলে বর্ণনা করেছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতি নিধনের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবরোধের হুমকি দিয়েছে এবং জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই সুযোগটি ব্যবহার করছে চীন।

তারা মিয়ানমারের সঙ্গে পশ্চিমাদের অনুপস্থিতিতে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মিয়ানমার সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছে। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। অং সান সুচির প্রতি নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব। সেই ভাবমূর্তি ঝালিয়ে নিতে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়ে কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে চীন।

এ ছাড়া মিয়ানমারের বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে তারা এরই মধ্যে বিনিয়োগ করেছে শত শত কোটি ডলার। চীন এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে তার প্রভাব বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার হলো তার ‘প্রাইম এসেট’। এটি তার সীমান্ত লাগোয়া প্রতিবেশী। দেশটির রয়েছে দীর্ঘ উপকূলভাগ। এই উপকূলভাগ ভারত মহাসাগরে প্রবেশে তাদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমার চীনাদের কাছে একটি লোভনীয় বিষয়।

তবে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে রয়েছে চীনা বিরোধী সেন্টিমেন্ট। তাদের সংশয় আছে যে, চীনের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে মিয়ানমারের চেয়ে চীনই বেশি উপকৃত হবে। এখানে সেনাবাহিনী আবার তাদের কর্তৃত্ব দেখাতে শুরু করেছে এবং অং সান সুচি একপেশে হয়ে পড়েছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা- এসব ঘটনা মিয়ানমারকে ক্রমবর্ধমান হারে নিঃসঙ্গ করে ফেলেছে। আর এই সুযোগটি ব্যবহার গ্রহণ করেছে চীন।

সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ওই সময়ে অং সান সুচি বলেছেন, রাখাইন ইস্যুতে চীনের অনুধাবনের মূল্যায়ন করে মিয়ানমার। এখানে উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছে চীন। রোহিঙ্গা সঙ্কট চীনকে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। তাহলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করা। এমনটা মনে করেন চীনের বিশ্লেষকরা।

এরই মধ্যে তারা সংঘাতে লিপ্ত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত নিরসনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হয়েছে। হংকংয়ের লিংনান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রফেসর বোহুই ঝাং বলেছেন, চীনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হলো বিশ্বকে দেখানো যে, তারা শান্তি রক্ষায় নতুন শক্তি। তারা শান্তি রক্ষা ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করে। ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট সি চীনের কূটনৈতিক শক্তিকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে কি হবে এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো রোহিঙ্গা সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তাতে চীনের কোনো দূত উপস্থিত ছিলেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে চীন।

ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনকে যুক্ত করে অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে চীন। এই করিডোর যাবে রাখাইনের মধ্য দিয়ে। রাখাইনের কাউকপাউতে আগামী বছর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ শুরু করবে চীনের বড় একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এতে খরচ হবে ৭৩০ কোটি ডলার। এই বন্দরটি নির্মিত হলে ভারত মহাসাগরে পৌঁছে যাবে চীন। এই বন্দর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস ও তেল দক্ষিণ চীনে নেয়া হবে রাখাইনের ভেতর দিয়ে।  -এমজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে