শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৩:২৭

ইসরাইলের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

ইসরাইলের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো অনিশ্চিত হওয়ায়, এতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে চায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণার আগ পর্যন্ত এরদোগান ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দাবি করেন।

এরদোগান বলেন, ফিলিস্তিন নাগরিকরা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত পূর্বাঞ্চলের শহর জেরুসালেমকে তাদের ভবিষ্যত রাজধানী হিসেবে মনে করে।

ট্রাম্পের সতর্কতাকে উপেক্ষা করে এরদোগান ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে প্যান ইসলামিক গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার জন্য তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

২০১০ সালে তুর্কি জাহাজ গাজার ওপর অবরোধ ভাঙার পর ইসরাইলের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর ২০১৬ সালে তুরস্ক পুনরায় ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ দেখায়। তবে এরদোগানের ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছার চেয়ে বরং হামাসের সাথেই সম্পর্ক বজায় রাখতেই তুরস্কের জনগণের আগ্রহ দেখা গেছে।

ট্রাম্পের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আগুনের গোলায় ঠেলে দেবে : এরদোগান

জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আগুনের গোলায় মধ্যে ঠেলে দেবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার গ্রিস সফরের উদ্দেশ্যে রাজধানী আঙ্কারা ত্যাগ করার আগে এসেবোগা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেন। ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনি কী করতে চাচ্ছেন?’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলকে একটি আগুনের গোলার মধ্যে নিক্ষেপ করবে।’

এরদোগান বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের উচিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, আগুন জ্বালিয়ে দেয়া নয়।’

জেরুসালেমকে খ্রিষ্টানদের জন্যও একটি পবিত্র স্থান উল্লেখ করে তিনি বিষয়টি নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সাথেও কথা বলবেন বলে জানান। এর আগে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন এরদোগান।

তিনি জেরুসালেমকে মুসলিমদের জন্য একটি রেড লাইন বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এদিকে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আগামী ১৩ ডিসেম্বর ওআইসির জরুরি বৈঠক ডেকেছে তুরস্ক।

তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বুধবার বলেছেন, জেরুসালেম ইস্যুতে স্পর্শকাতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর ওআইসির সদস্য দেশগুলোর নেতারা ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসবেন। মুসলিম দেশগুলো জেরুসালেমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। (৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদ)

গ্রিস সফর তুর্কি প্রেসিডেন্ট

দীর্ঘ ৬৫ বছর পর প্রথম তুরস্কের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রজব তাইয়েব এরদোগান গ্রিস সফরে গিয়ে বিরোধপূর্ণ অনেক ঐতিহাসিক ইস্যু নিয়ে দরকষাকষি শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে গ্রিক প্রেসিডেন্ট প্রোকোপিস প্যাভলোপুলোসের সাথে বৈঠকে এরদোগান বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২৩ সালে যে চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হয়, তা ন্যায্যভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। এই চুক্তির পুনঃপর্যালোচনা হওয়া উচিত।

নানা ইস্যুতে বিরোধের কারণে দীর্ঘ দিন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানেরা গ্রিস সফর না করলেও এরদোগান সেই অচলাবস্থার সমাপ্তি ঘটালেন এবং তুরস্কের দাবিদাওয়া নিয়ে খোলামেলা কথা বলা শুরু করেছেন; কিন্তু গ্রিক প্রেসিডেন্টও বলেছেন, ‘লুজান চুক্তির কোনো পরিবর্তন হবে না’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর তধাকথিত চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির নাম ‘লুজান চুক্তি’। সুইজারল্যান্ডের লুজানে এই চুক্তির এক পক্ষে তুরস্ক (তৎকালীন ওসমানি সালতানাত) এবং অন্য পক্ষে ব্রিটেন, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, রোমানিয়া এবং সার্ব, ক্রোট ও স্লোভেনিজ সাম্রাজ্য (সাবেক যুগোস্লাভিয়া) স্বাক্ষর করে। যে কারণে চুক্তিটি ইতিহাসে লুজান চুক্তি নামে পরিচিত। ওই চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হয়। এরদোগান বলেন, চুক্তি ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। লুজান চুক্তি ছাড়াও আরো অনেক ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে গত কয়েক দশক ধরে সম্পর্ক ভালো যায়নি।

এজিয়ান সাগরে জনবসতিশূন্য দ্বীপপুঞ্জের মালিনাসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে গিয়েছিল। বিভক্ত সাইপ্রাস নিয়েও তারা এখনো কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে পারেনি। এথেন্সের সাহায্যে সামরিক অভ্যুত্থান হলে এর জবাবে ১৯৭৪ সালে দ্বীপটির উত্তরাংশে অভিযান চালায় তুরস্ক।

তুরস্ক বলছে, উত্তর-পূর্ব গ্রিসে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে না। এথেন্সে এরদোগান বলেছেন, নিজেদের জন্য ধর্মীয় নেতা বা মুফতি বেছে নিতে দেয়া হয় না তাদের। এই দায়িত্বে গ্রিসের পছন্দমতো লোক নিয়োগ দেয়া হয়। গত বছর তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় গ্রিসে পালিয়ে আসা আটজন তুর্কি সেনা কর্মকর্তাকে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে গ্রিক সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এরদোগান। তুরস্কের হাতে অনেক ইস্যু থাকলেও গ্রিস অভিযোগ করেছে, তুর্কি বাহিনী বারবার গ্রিক আকাশসীমা ও নৌসীমা লঙ্ঘন করেছে।-এএফপি
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে