দেশে দেশে আতঙ্ক, সতর্কবার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সের প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বড় বড় শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে ফরাসি স্থাপনাগুলোয়ও নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা।
নাশকতার আশঙ্কায় শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা জন্য চেক পোষ্ট শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব। ব্যাপক তল্লাশিও চলছে যানবাহনগুলোতে। কূটনীতিক পাড়ায় বাড়তি নিরাপত্তাও নেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের জরুরী সভায় ডাকা হয় ডিএমপি অপরাধ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারদের। আলোচনায় প্রধান্য পায় রাজধানীর নিরাপত্তার বিষয়।
প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার খবর পাওয়া মাত্র বিভিন্ন শহরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, বোস্টন ও সেন্ট লুইসে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাজধানীতে আইনসভা ভবন ক্যাপটল হিল এলাকায় বিশেষ টহল জোরদার করে পুলিশ। সেন্ট লুইসে বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্বের ম্যাচ থাকায় সেখানে নিরাপত্তা স্তর বর্ধিত করা হয়েছে।
মার্কিন সব বিমানবন্দর, রেলস্টেশন ও অন্যান্য জনবহুল স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্যারিসে হামলার পর পরই নিউইয়র্কে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়। শহরের জনবহুল স্থানগুলোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া শহরটিতে অবস্থিত ফরাসি স্থাপনাগুলোয়ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের অধীনে থাকা সেতু, টানেল ও রেল স্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ম্যানহাটনে অবস্থিত ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। শহরে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সব বাস ও ট্রেনে এবং আরোহীদের ব্যাগও তল্লাশি করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, পূর্ব সতর্কতা ও নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে জনসমাগমপূর্ণ স্থানগুলোয় সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, নিউইয়র্কে হামলা হতে পারে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও ফরাসি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
প্যারিস হামলার পর পরই সরকারের জরুরিবিষয়ক কমিটির বৈঠক ডেকেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটেনের অন্যতম ব্যস্ত গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উত্তর টার্মিনাল পূর্ব সতর্কতা হিসেবে খালি করে ফেলা হয়েছে।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পুলিশ জানিয়েছে, শহরে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। দূতাবাসসহ ফরাসি স্থাপনাগুলোর রাস্তায় প্রতিবন্ধক বসানো হয়েছে। অনেক জার্মান দূতাবাসটির সামনে ফুল রেখে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অ্যাপেক সম্মেলন হওয়ার কথা। এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ১৫টি দেশের সরকারপ্রধানদের যোগ দেওয়ার কথা। সম্মেলন উপলক্ষে দেশটি তাদের পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদো বলেছেন, ভবিষ্যৎ হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখে তিনি তার দেশের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে কাজ করবেন। বেলজিয়াম তার ফ্রান্স সংলগ্ন সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সতর্কতার মাত্রা উন্নীত না করলেও দেশটি বলেছে, বড় সব অনুষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সিঙ্গাপুরও। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম এক বিবৃতিতে বলেন, আমরাও সতর্কতার স্তর বাড়িয়ে দিয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সীমান্তে তল্লাশি ও পাহারা জোরদার করেছি। বিশ্বের কোনো দেশই আর নিরাপদ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যের এ শহরেই ২০০৮ সালে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তয়্যেবা। রাজ্যের আরও কয়েকটি শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েও রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী দিল্লিসহ গুরুত্বপূর্ণ ও পর্যটন শহরগুলোয়ও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
১৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ