আন্তর্জাতিক ডেস্ক:পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ২৭শে জানুয়ারি এক আত্নঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভা শেষ করে গাড়িতে ওঠার সময় তাকে গুলি করে এবং পরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। সেসময় অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানী তালেবান জঙ্গী গোষ্ঠী এই হামলার জন্য দায়ী।
বেনজির ভুট্টো নব্বইয়ের দশকে দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর জন্য তাঁর শাসন কখনই মসৃণ হয়নি। সেসময় বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আর হত্যাকান্ডের সময় তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবার দৌঁড়ে নেমেছিলেন বেনজির ভুট্টো। তাঁর হত্যাকাণ্ড সমর্থকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিলো। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় পাকিস্তানে।
বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর পারভেজ মুশাররফ এই ঘটনার সাথে পাকিস্তানের রাষ্ট্রের কোন অংশ জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষথানের বিরুদ্ধে তালেবান জঙ্গিদের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও পারভেজ মুশাররফ তাঁর কাছে এ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন, তারপরও তিনি মনে করেন বেনজির হত্যাকান্ড সম্পর্কে তাঁর ধারণা সঠিক। যদিও পারভেজ মুশাররফকেও এই হত্যাকাণ্ডে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এই মামলার আইনজীবীরা জানিয়েছেন ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেনজির ভুট্টো ওয়াশিংটনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফ বেনজির ভুট্টোকে টেলিফোন করে দেশে ফেরার ব্যাপারে হুমকি দিয়েছিলেন। বেনজির ভুট্টোতাঁর সহযোগীদের জানিয়েছিলেন মুশাররফ তাকে হুমকি দিয়ে পাকিস্তানে ফেরার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এর তিন সপ্তাহ পরে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বেনজিরের একজন ঘণিষ্ঠ সহযোগীর দাবি পারভেজ মুশাররফ বেনজিরকে বলেছিলেনদেশে ফেরার পর কিছু ঘটলে তাঁর দায়ভার তিনি নেবেন না।
তবে মামলায় অভিযুক্ত হবার পর দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা পারভেজ মুশারফ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি বেনজির ভুট্টোকে তিনি কখনোই টেলিফোন করেননি। বেনজির হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেন, এমন অভিযোগ হাস্যকর। তবে মুশাররফের এমন বক্তব্য মানতে রাজি নন বেনজির ভুট্টোর পরিবার।
আদালতে থেকে মুশাররফ এখনো ছাড়া না পেলেও মামলার অন্যান্য আসামীরা খালাস পেয়েছেন। এই মামালায় প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া আইতজাজ শাহকে প্রথমে হামলার জন্য বাছাই করা হলেও পরে তাকে ব্যবহার করা হয়নি। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আরো দুজন পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডের আগে হামলাকারীকে তথ্য দিয়ে সহায়তার কথা স্বীকার করেছিলো।
তবে পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি তারা পরে প্রত্যাহার করে। প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে তা প্রমাণিত হয়নি। একারণে আদালত অভিযুক্তদের খালাস দেন। তবে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকায় অভিযুক্তরা এখনও কারাগারেই রয়েছেন।
বেনজির ভুট্টো ছিলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রথম নারী সরকার প্রধান। তিনি ১৯৮৮ সালে প্রথমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অপশাসনের অভিযোগ ওঠে।
১৯৯৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখান থেকে ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। তাঁর দেশ ফিরে আসা উপলক্ষে করাচীতে সংবর্ধনা র্যালিতেও সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিলো। সে হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৫০জন। সূত্র: বিবিসি
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি