সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৪০:৫৫

কারাবন্দীদের পাহারায় এবার কুমিরের সাথে যোগ হচ্ছে বাঘ-পিরানহা

 কারাবন্দীদের পাহারায় এবার কুমিরের সাথে যোগ হচ্ছে বাঘ-পিরানহা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দীদের পাহারার দায়িত্ব দেয়া হবে হিংস্র কুমিরদের ওপর কারন কুমিররা ঘুষ দেয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি ঘুষ বানিজ্য বন্দ করতে ইন্দোনেশিয়ার মাদকবিরোধী প্রধান কর্মকর্তা বুদি ওয়াসেসোর এমন পরিকল্পনার ঘোষনা করেছিলেন। কিন্তু এ ঘোষণাটিকে যখন সবাই নিছক ঠাট্টা হিসেবে উড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন, তখনই ওয়াসেসো জানালেন- শুধু কুমির নয়, নতুন ধরনের এই পাহারাদার বাহিনীতে তিনি যোগ করতে চান বাঘ ও পিরানহাও! গত সপ্তাহের শুরুতেই ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দীদের নির্বাসনে রাখা দ্বীপটিতে প্রহরী হিসেবে কুমির নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ওয়াসেসো। এই বক্তব্যের পক্ষে তার যুক্তি ছিল- কুমিরদের ঘুষ দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ওয়াসেসোর এই ঘোষণার পরপরই ইন্দোনেশীয় সরকার বিপুল উদ্যমে বিষয়টিকে নিছকই মজা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল। আর সরকারের ওই ব্যাখ্যাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বিকার ওয়াসেসো এবার জানালেন, শুধু কুমির নয়, পাহারাদার হিসেবে মানুষখেকো বাঘ আর পিরানহাও ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মাদকদ্রব্য সংস্থা- বিএনএন’র প্রধানের সূত্র উল্লেখ করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শক্তি ও ক্ষিপ্রতা পরীক্ষার জন্য একটি খামার থেকে এরই মধ্যে দু’টো কুমির নিয়েও এসেছেন ওয়াসেসো। দণ্ডপ্রাপ্তরা যেন পালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে কুমির বাহিনীর শক্তি ও ক্ষিপ্রতা অনুযায়ী প্রায় এক হাজার কুমিরকে ‘নিয়োগ’ দেয়া হতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসেসো বলেন, ‘কতো বড় এলাকা, কিংবা কতগুলো পিরানহা যোগ করা হবে, তার ওপর নির্ভর করছে কুমিরের সংখ্যা কতো হবে। কারা কর্মকর্তাদের সংখ্যা কম বলেই আমরা এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণি ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া বাঘও ব্যবহারের কথাও চিন্তা করা হচ্ছে ।’ এসব খবরের সত্যতা যাচাই করতে ওয়াসেসো বা তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। মূলত কারাপ্রহরীদের জায়গায় মানুষের বদলে এসব হিংস্র প্রাণি রাখারই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওয়াসেসো। তিনি মনে করেন, ইন্দোনেশিয়ার কারা ব্যবস্থায় কুখ্যাত সমস্যা- প্রচলিত দুর্নীতি কমানোর এটিই একমাত্র উপায়। তিনি বলেন, ‘কুমিরদের ঘুষ দিতে পারবেন না আপনি। কয়েদিদের পালাতে দেয়ার জন্য এই হিংস্র প্রাণিদের কিছু বোঝাতে পারবেন না আপনি।’ তীক্ষ্ণ দাঁত ও শক্তিশালী চোয়ালসম্পন্ন মাংসখেকো পিরানহা মাছের আদিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। ইন্দোনেশিয়ায় এ মাছ পাওয়া যায় না। ওয়াসেসোর এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের প্রাণিদের কারাপ্রহরী হিসেবে ব্যবহার মানে দণ্ডপ্রাপ্তদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। এক পৃথক সাক্ষাৎকারে এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে ওয়াসেসো বলেন, ‘পুরো সমস্যার দিকে তাকাতে হবে আমাদের। এই লোকগুলো হত্যাকারী- গণহত্যাকারী। তাদের গণহত্যার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের মানবাধিকারের দিকে তাকানো কি আমাদের উচিত নয়?’ ‘মাদক পাচারকারীদের শাস্তি হওয়া উচিত তাদের শরীরে তাদের নিজেদেরই সরবরাহ করা মাদক অতিরিক্ত পরিমাণে প্রয়োগের মাধ্যমে’- বিএনএন’র এক কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের কারণে এর আগে বিতর্কিত হয়েছিল সংস্থাটি। এক বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো মাদকের বিরুদ্ধে ‘জরুরি অবস্থা’র প্রেক্ষিতে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে দেশটিতে প্রতিদিন মাদক সেবনের কারণে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হচ্ছে, যার প্রেক্ষিতে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। মাদক চোরাচালানকারীদের ক্ষমা না করার বিষয়টি বারবার জোরের সঙ্গে জানিয়েছিলেন উইডোডো। অধিকাংশ বিদেশীসহ মাদক আইনে প্রায় ২৫ জনকে পাঁচ বছরের স্থগিতাদেশসহ চলতি বছর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে ইন্দোনেশিয়া। জানা গেছে, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পিত এই কারাগারের জন্য এরই মধ্যে জায়গা খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে দেশটির ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৬, নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে