শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৪:৫৬

পার্টি গার্ল থেকে আত্মঘাতী বোমারু

পার্টি গার্ল থেকে আত্মঘাতী বোমারু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২৬ বছরের এক তরুণী। বেড়ে উঠেছে প্যারিসের দরিদ্র শহরতলীতে। পার্টিতে গিয়ে আমোদ-ফুর্তি করতে ভালোবাসতো। বন্ধুদের ভাষায় হাসিখুশি এক মেয়ে। যদিও শৈশবে অনেক দুঃখজনক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। সেই মেয়েটি কিভাবে জঙ্গীদের সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে আত্মঘাতী বোমারুতে পরিণত হলো সেই সমীকরণ যারা তাকে চিনতেন তাদের কেউ মেলাতে পারছেন না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে। প্যারিসের শহরতলীর যে ফ্ল্যাটকে ঘিরে বুধবার ভোররাত থেকে জঙ্গীদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র লড়াই চলেছে, সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় হাসনা আইটবুলাসেনের মৃতেদহ। পুলিশের ধারণা, একটি আত্মঘাতী বোমার বেল্ট বাঁধা ছিল তার শরীরে। এই অভিযান চলার সময় এক পর্যায়ে সেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের ধারণা যদি সত্যি হয়, হাসনা আইটবুলাসেন হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গী। প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতা বলে যাকে ধারণা করা হয়, সেই আবদেলহামিদ আবাউদের দূর সম্পর্কিত বোন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে হাসনা আইটবুলাসেনকে। প্যারিসের যে এলাকায় হাসনা বেড়ে উঠে, সেখানে তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, তার শৈশব বেশ দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে কেটেছে। অল্প বয়সে তার মা এবং ভাই-বোনদের ফেলে চলে যায় তার বাবা। প্যারিসের খুবই গরীব এক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকে তার মা। সেখানে এখন কড়া পুলিশ প্রহরা। হাসনা আইটবুলাসেনের সঙ্গে এক সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন খেমিসা। তিনি বলছেন, ‘হাসনা জীবনকে ভালোবাসতো। আমার মনে হয় না আত্মঘাতী বোমারু হওয়ার কোন ইচ্ছে ওর ছিল। কেউ হয়তো শেষ মূহুর্তে ওকে প্রভাবিত করেছে’। খেমিসা আরও জানান, তারা দুজন এক সঙ্গে নাচের ক্লাসও করেছেন। ‘ও নাচে খুব ভালো ছিল, ভালো গ্রেড পেয়েছিল। আমার মনে হয় না ও মানসিকভাবে সুস্থির ছিল। আমার ধারণা ওকে হয়তো মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। হয়তো ও মাদক নিয়েছিল। যদি ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতো এরকম একটা কাজ ও করতে পারতো না’। তবে হাসনা আইটবুলাসেন একবার ফেসবুকে সিরিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল সেটা স্বীকার করলেন খেমিসা। ‘আমরা তখন তাকে বিশ্বাস করিনি। আমরা ভেবেছি এসবই অর্থহীন কথাবার্তা’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মহিলা জানিয়েছেন, হাসনা বেড়ে উঠেছে এমন এক পরিবারে যেখানে নানা সমস্যা ছিল। খুব বিষাদময় শৈশব ছিল তার। ‘তারপরও আমি কল্পনা করতে পারছি না এরকম একটা কাজ ও করেছে। সবসময় আমি ওকে হাসিখুশি দেখেছি, খুবই ভদ্র এবং নম্র মেয়ে ছিল’। হাসনা কি খুব ধর্মভীরু ছিল? বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণ থেকে তার উল্টো চিত্রই পাওয়া যায়। ‘লে রিপালিকান লোরেন’ নামের স্থানীয় এক সংবাদপত্রে তার এক প্রতিবেশিকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, যে মদ পান করতো। মাথায় বিরাট একটা হ্যাট পরতো। যার জন্য তাকে অনেকে ‘কাউগার্ল’ বলেও ডাকতো’। ব্রিটেনের ডেইলি মেল পত্রিকা হাসনার ভাইকে উদ্ধৃত করে বলছে, ‘আমি তাকে জীবনে কখনো কোরান পড়তে দেখিনি। সারাক্ষণ সে তার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এসব নিয়ে সময় কাটাতো’। মাত্র আট মাস আগে থেকে হাসনা আইটবুলাসেন হঠাৎ ধর্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। তাকে নিকাব পরতে দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে সমর্থন করে নানা রকম বক্তব্যও পোষ্ট করতে থাকে। ২০ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে