মাত্র ৩ জঙ্গি, মিলছে না হিসাব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রেডিসন ব্লু-হোটেলে সেনা অভিযান শেষ হওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে একদিন আগে৷ তবু নিহতদের সংখ্যা নিয়ে মিলছে না হিসেব৷ শনিবার দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার স্বয়ং জানিয়েছেন গুলিযুদ্ধ চলার সময় মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের৷ নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুই জঙ্গিও৷ টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে।
শুক্রবার রেডিসন হোটেলে অন্তত ১০ জন সশস্ত্র জঙ্গি ঢুকেছিল, তা নিয়ে একমত হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাকর্মীরাও জানিয়েছেন, যে ভাবে বিভিন্ন তল থেকে গুলি ছুটে আসছিল তা মাত্র তিন জনের বন্দুক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না৷ তাহলে বাকিদের কী হল? মিলছে না সেই হিসেবই৷
সেনাবাহিনীর এক কম্যান্ডার জানিয়েছেন, হোটেলের বেসমেন্টে অন্তত ১২টি ও প্রথম তলায় অন্তত ১৫টি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি৷ কিন্তু, শনিবার সকালে এক প্রেস বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার নিহতদের যে হিসেব দিয়েছেন তা এর চেয়ে অনেকটাই কম৷ তিনি জানিয়েছেন অন্তত দুই জঙ্গির দেহ পাওয়া গিয়েছে৷ এ ছাড়া ১৯ জনের দেহ বাইরে আনা হয়েছে৷ চীনা প্রশাসন জানিয়েছে, হোটেলে গুলির যুদ্ধ চলার সময় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন চীনের তিন নাগরিক৷ তারা স্থানীয় অঞ্চলে রেল লাইন বসানোর কাজের তদারকি করতে গিয়েছিলেন৷
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার এক নাগরিকও৷ আনিতা দাতার নামের ওই নাগরিক আফ্রিকায় জনকল্যাণমূলক কাজের একটি সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন৷ জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বেলজিয়ামের এক রাজনীতিবিদ জিওফ্রে দিওদোন-ও৷ তিনি বেলজিয়ামের ওয়ালোনিয়া অঞ্চল থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্টের সদস্য৷ তিনি মালিতে কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়৷
মালির হোটেলে এমন জঙ্গি হামলার সঙ্গে প্যারিসের ঘটনার আপাত ভাবে কোনও যোগাযোগ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে৷ শনিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অল্যাঁদও এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ কিন্তু অল্যাঁদ একই সঙ্গে জানিয়েছেন, 'এমন জঘন্য হামলা করে জঙ্গিরা ফের বুঝিয়ে দিল সাধারণ মানুষ কত অসহায়৷ এমন পরিস্থিতি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদলানো জরুরি হয়ে পড়েছে৷'
আপত্কালীন পরিস্থিতিতে মালিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার করুণ হাল আরও একবার ধরাপড়লো শুক্রবারের ঘটনায়৷ ২০১৩ সাল থেকেই এখানে ফরাসি, মার্কিন ও মালির সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে৷ তবু, সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক লাইসেন্স প্লেট ব্যবহার করে যে ভাবে জঙ্গিরা দেশের সবচেয়ে নামকরা ফাইভ-স্টার হোটেলে হামলা করতে পারল তাতে হতবাক বিশ্ব৷ নিহতদের সংখ্যা কমিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম দেখানোর যে প্রয়াস চালাচ্ছেন মালির প্রেসিডেন্ট, তাতেও পরিস্থিতির গুরুত্ব কিছুমাত্র কমছে না৷
অন্য দিকে, সাহারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ত্রাস হিসেবে পরিচিত আল-কায়দা ইন ইসলমিক মাঘরিবের (একিউআইএম) শীর্ষনেতা মোক্তার বেলমোক্তারের মৃত্যুর খবর সব দিকে ছড়িয়ে পড়ার পর সেই খবরকেই নিশ্চিত বলে মনে করা হয়েছিল৷ কিন্তু, বামাকোয় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিরা বুঝিয়ে দিল, নেতাকে হারিয়ে সাময়িক ভাবে তারা থমকে গেলেও, নতুন করে নিজেদের তৈরি করে নিতে সময় লাগেনি তাদের৷
২২ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�