আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘদিনের পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা, প্রেম। কিন্তু সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি দুই পরিবারই। ভালোবাসার পরিণতি দিতে পালিয়ে গিয়েই বিয়ে করেছিল প্রদীপ ও প্রমীলা। কিন্তু তার বদলে নিয়ে তরুণীর পরিবার যুবকের বিরুদ্ধে দায়ের করল অপহরণের মামলা। আর সে কথা কানে আসতেই তাতে চরম পরিণতি বেছে নিলেন নবদম্পতি।
হাতে শাখা পলা, কপালে লেপটে যাওয়া সিঁদুর, পরনে লাল শাড়ি আর পাত্রের পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি। নবদম্পতি যে বিয়ের পর হানিমুনে এসেছেন, তা বুঝতে দেরি হয়নি হোটেল মালিকেরও। বেছে সবচেয়ে ভালো ঘরটিই ভাড়া দিয়েছিলেন তাঁদের।
এসজানালা দিয়ে দেখে যাবে সমুদ্র সৈকত। সন্ধ্যায় চাঁদের আলো এসে পড়বে ব্যালকনিতে-এমন ঘরের চাবি যখন হাতে নিয়েছিলেন ২৪ বছরের প্রদীপ নিয়ক ও তাঁর সদ্য স্ত্রী সতেরো বছরের প্রমীলা রাউত, তখনও তাঁদের দেখে কেউ বোঝেননি ওই ঘর থেকেই বেরোবে তাঁদের নিথর দেহ।
রবিবার রাতে ভারতের নিউ দিঘার সমুদ্র সৈকতের একটি হোটেল থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, প্রদীপ ও প্রমীলা দুজনেই রামনগরের বাসিন্দা। কিছুদিন আগেই প্রমীলার বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায় তাদের সম্পর্কের কথা।
প্রদীপকে কোনোভাবেই মেনে নেননি প্রমীলার বাবা-মা। এই নিয়ে বাড়িতে একাধিকবার ঝামেলাও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার পরিণতি দিতে প্রদীপের হাত ধরেই ঘর ছেড়েছিলেন প্রমীলা। মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন। রোববার বিকালে গিয়ে উঠেছিলেন নিউ দিঘার একটি হোটেলের রুমে।
এদিকে মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে জানতে পেরে প্রমীলার বাবা-মা প্রদীপের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রদীপের বাবা রাজকুমার নায়েককে গ্রেফতার করে। বাবার এমন পদক্ষেপের কথা কানে আসতেই মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে প্রমীলার। বিপদে পড়তে পারে তার ভালোবাসা, একথা আঁচ করতে পেরেই চরম সিদ্ধান্তের পথ বেছে নিলেন প্রমীলা ও প্রদীপ।
নিয়মমাফিত প্রমীলা-প্রদীপের রুমে রবিবার রাতে চা দিতে গিয়েছিলেন এক হোটেল কর্মী। বহু ডাকাডাকিতেও দরজা না খোলায় নিচে গিয়ে ম্যানেজারকে জানান হোটেলকর্মী। দরজা ভাঙতেই চোখে পড়ে, লাল শাড়িতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন প্রমীলা। সেই একই ফাঁসে ঝুলছেন প্রদীপও। প্রমীলার কপালে তখনও জ্বলজ্বল করছে সিঁদুর। বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে হয়তো এটাই ছিল তাঁদের চরম পদক্ষেপ।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/