ইরাকি তেলে ভাসছে যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্ট্যাটিসটিকস। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক দল বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অনেক তথ্য জড়ো করেছে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজার নিয়ে। তাদের সর্বশেষ বিশ্লেষণ মতে, গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে সর্বাধিক পরিমান তেল আমদানি করেছে, যা পরিমানে সাবেক আমদানির পরিমানের তুলনায় দ্বিগুন। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই পরিমান তেল প্রবেশ করায় স্বাভাবিক নিয়মেই তেলের মূল্য কমে গেছে। অপরিশোধিত তেলের মূল্য প্রায় চার মাস ধরে ব্যারেল প্রতি চল্লিশ দশমিক শূণ্য ছয় ডলার থাকলেও নভেম্বর মাসে এসে তা ১২ শতাংশ কমে যায়।
উচ্চহারে ইরাকি তেল আমদানি করার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক করে তোলে। আইএসআইএস নামের সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে ধ্বংস করার জন্য ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর সিরিয়ায় বিমান হামলা আরও জোরদার করা হয়েছে।
সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভয়ের কারণে সরবরাহে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং মূল্য অনেক বেড়ে যায়, যা এবার হয়নি কিন্তু। বাস্তবতা হলো, বিপুল পরিমান মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহে ভাঙন ধরানোর ইঙ্গিতও দেয়। গবেষক দলের কার্যনির্বাহী সম্পাদক লুসিয়ানো বাত্তিসতিনির মতে, ‘ওখানে শুধু পুঁজি এখন তার অত্যাধিক সরবরাহ নিশ্চিত করছে।’ বিশ্বের শেয়ারবাজারগুলোও এই কারণে কোনো ভয় পাচ্ছে না। দুই মাস আগেরও এক অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায় যুদ্ধের এই অবস্থার মাঝেও বাজার পরিস্থিতিতে কোনো সমস্যা হয়নি।
এটাও সত্যি যে, আইএসআইএস’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যে অর্থের যোগান প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য চলতি বছর ইরাক বেশ উচুহারেই তেল উত্তোলন করছে এবং অল্পমূল্যে বাজারে তা বিক্রি করে দিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির মতে, ‘ওপেকভুক্ত দেশগুলো ব্যাপক পরিমানে তেল উত্তোলন করছে, বিশেষ করে ইরাক বিশ্বব্যাপী তিন বিলিয়ন তেলের মধ্যে মারাত্মক হারে তেল উত্তোলন করছে।’ চলতি বছরে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর প্রত্যেকের অতিরিক্ত এক বিলিয়ন তেল উত্তোলন করতে হচ্ছে। আর এই তেলগুলোর গতি শেষমেষ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার।
এই ভারসাম্য পরিবর্তনের সাধারণ ফলাফল এই যে, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছে ইউরোপের তুলনায় উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে তেল পরিশোধনের কাজ অনেক কম ব্যয়বহুল। বাত্তিসতিনির মতে, ‘উপসাগরীয় অঞ্চলগুলো সকলকে অর্থনৈতিক সর্বোচ্চ ভালো প্রস্তাবটিই দেয়। এখানে যদি কেউ অর্থ উপার্জন করতে চায় তাহলে স্রেফ অপরিশোধিত তেলগুলো এখানে পাঠাতে হবে।’ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহগুলোতে ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন পাঁচ লাখ একুশ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। গত আগস্ট মাসেও এই পরিমান তেল আমদানি করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমেরিকা এখন পর্যন্ত একাই ইরাকের বাইরেও অন্য অনেক উৎস থেকে তেল আমদানি করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে প্রতিদিন নয় লাখ এবং কানাডা থেকে তিন লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। সৌদি আরব চলতি বছরে যতবারই অর্থনৈতিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে ততবারই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বন্ড বিক্রি করেছে। সর্বশেষ জানা মতে, দুই বিলিয়ন ডলারের বন্ড এই বছরের মাঝামাঝিতেই বিক্রি হয়েছে। আর এই সংখ্যক বন্ডের বিনিময়ে সৌদি আরবকেও অল্পমূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেল বিক্রি করতে হয়েছে।-বাংলামেইল
২৩ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ রাসেল/মাহমুদ
�