আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আরেক কলকাতা, অন্যরকম সম্প্রীতি! পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখন রাম নবমী উপলক্ষে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কান পাতা দায়, তখনই সম্পূর্ণ অন্য ছবি ধরা পড়ল খিদিরপুরে।
সেখানে রাম নবমীতে হিন্দু ভাইদের হাতে সরবত তুলে দিলেন মুসলিম ভাইরা। মুহূর্তেই যেন ফিকে হয়ে গেল হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের খণ্ডচিত্র। উজ্জ্বল হয়ে উঠল সাবেক বাংলার ভাবমূর্তি। নিমেষে মিলেমিশে এক হয়ে গেলেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।
গেরুয়া নিশান নিয়ে যারা বাইকে করে বেরিয়েছিলেন, তাদের ঘাম মুছিয়ে দিলেন মুসলিম ভাইরা। এলাকার লোকজন মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেন শরবতের গ্লাস। তাতে চুমুক দিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘এই সহাবস্থানই আমাদের ঐতিহ্য। খুবই ভাল লাগছে।’
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? মাথায় গেরুয়া পরা এক হিন্দু ভাইয়ের দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে এলাকার সংখ্যালঘুরা বলছেন, ‘ইদ, মহরমে ওরা সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। এই এলাকাই সব ধর্মের মানুষের বাস। হিন্দু, ইসলাম, শিখ, খ্রিস্টান-সব ধর্মের মানুষই রয়েছে। সবাই বড় হয়েছি এক সঙ্গেই। মিছিলে সব বয়সের মানুষ ছিলেন।
গরমে হেঁটে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই এটুকু করলাম। মহৎ উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন তৃণমূল নেতা ও চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটির কর্তা ইয়াসির হায়দার। নিজেই জানাচ্ছেন, এসব ধর্ম-টর্ম মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে না। আগে মানুষ, পরে ধর্ম। এ রাজ্যের মানুষ এই রীতিতেই অভ্যস্ত।
এখন কেউ কেউ মানুষে মানুষে ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি করতে চাইলেও বাংলার মানুষই সেই সব অশুভ শক্তিকে রুখে দেবেন। ইয়াসির হায়দার সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জামাই হন।
পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বলছেন, ”রাম নবমী কারও একার উৎসব হতে পারে না। বিজেপি এখন ধর্ম বেচে খাচ্ছে। বাংলার মানুষ স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী রামকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্যকে চেনেন। ধর্মের নামে রাজনীতি করছে বিজেপি। এর প্রতিবাদ করবেন মানুষই।’
কলকাতার এই চিত্র কিন্তু কোনও বিচ্ছিন্ন দৃশ্য নয়! রাজ্য জুড়ে এরকম বহু টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ তৈরি হয় রবিবার। রাম নবমীতে সম্প্রীতির ছবি ফুটে ওঠে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে। সেখানে তৃণমূল পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে একই মিছিলে পা মেলান হিন্দু-মুসলিমরা।
অংশগ্রহণকারীদের হাতে উঁকি দিচ্ছিল রাম নবমীর পতাকা ও তৃণমূলের পতাকা। মিছিলে ছিলেন মহিলারাও। তবে কারও হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। শুধুই রাম ও হনুমানের ছবি দেওয়া পতাকা। বলরামপুরে বজরং দলের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুসলিম যুবকরা জল, সরবত, খেজুর বিলি করেন।
রঘুনাথপুরের ওই মিছিল গোটা শহর পরিক্রমা করে। একই ছবি ধরা পড়ে দুর্গাপুর, অন্ডাল-সহ পশ্চিম বর্ধমানের নানা এলাকায়। বেশ কিছু এলাকাতেই রাম নবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া মানুষদের দিকে সরবতের গ্লাস বা়ড়িয়ে দেন মুসলিম ভাইরা।
দেখা যায়, মিছিল গ্রামে ঢোকার সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারী যুবকদের হাতে সরবতের গ্লাস ধরিয়ে দিচ্ছেন পাঠান পাড়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবকরা। গরমে ঠান্ডা সরবত হাতে পাওয়ার জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। তৈরি হয় সৌভ্রাতৃত্বের এক আদর্শ মুহূর্ত। সংবাদ প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস