বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০৬:৫৫

বাংলাদেশ সীমান্তে আবারো ভারী অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে মিয়ানমার

বাংলাদেশ সীমান্তে আবারো ভারী অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্মমতা এখনো থামেনি। অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করতেই মিয়ানমার এই নির্মমতা অব্যাহত রেখেছে বলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া অনেকেই জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, এবার নির্মমতার ধরন বদলে গেছে।

এ দিকে গত বুধবার থেকে রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তে আবারো ভারী অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির পরও রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ ও সেনাদের লেলিয়ে দেয়া রাখাইন বৌদ্ধ গোষ্ঠী। ফলে চুক্তির পরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

গত পাঁচ মাসে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার কারণে সন্দেহ করা হচ্ছে চলতি বছরেই রোহিঙ্গাদের শেকড় উৎপাটন করবে সৈন্যরা। রাখাইনে একজন রোহিঙ্গা মুসলিমকেও থাকতে দেয়া হবে না- এমন কঠোর মনোভাব নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান ও গণবিতাড়ন অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। ফলে বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে সীমান্তের ওপারে নাফ নদীর তীরে, বনে-জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ৮৪ জন রোহিঙ্গার একটি দল বাংলাদেশের টেকনাফে হাবিরছড়া উপকূলীয় পয়েন্ট দিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের তথ্য মতে, রাখাইনের মংডু ও বুচিডংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো রোহিঙ্গা নিপীড়ন করে যাচ্ছে সরকারি বাহিনী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া নাডালা সদস্যরা।

রোহিঙ্গাদের গ্রামের বাইরে যেতে না দেয়া, রোহিঙ্গা গ্রামে ফড়িয়া ব্যবসায়ী ও হকারদের ঢুকতে না দেয়া, এনভিসি নামক অভিবাসন কার্ড নিতে জোর খাটানো, হাট-বাজারে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণসহ নানাভাবে নিপীড়ন করছে তারা। ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিজমা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছেন রোহিঙ্গারা।

রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মনোভাব কখনো শতভাগ ইতিবাচক ছিল না। বিশেষ করে উগ্র রাখাইনরা বছরের পর বছর রোহিঙ্গাদের ওপর হামলে পড়েছে। কখনো হত্যা, কখনো আগুনের লেলিহান শিখা আবার কখনো বলপূর্বক বিতাড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুরা দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রাখাইনের মংডু এলাকা এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওই সব এলাকায় গুটিকয়েক রোহিঙ্গা থেকে গেলেও তারাও এখন এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। মংডু থেকে পালানো এক রোহিঙ্গা বলেন, ওখানে প্রতিদিন ভারী অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই সব যুদ্ধ সরঞ্জাম সড়কপথ এবং নৌপথে সরবরাহ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য করছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী।

কী উদ্দেশ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যুদ্ধ সরঞ্জাম সমাবেশ করছে তার কোনো সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের এসব অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করাই তাদের টার্গেট।

ওপারে রোহিঙ্গাদের সূত্র মতে, গত বুধবার যুদ্ধ সরঞ্জামভর্তি দু’টি জাহাজে করে বেশ কয়েকটি ট্যাংক এবং ভারী অস্ত্রসস্ত্র মংডুতে সরবরাহ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সাথে অনেক নতুন সেনাও যোগ দিয়েছে।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করলেও বাংলাদেশের সাথে তাদের আচরণ মোটেই সন্তোষজনক নয়। সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয় হলেও সেনাবাহিনী বরাবরের মতোই রোহিঙ্গাদের বলে আসছে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী। রোহিঙ্গারা যে তাদের দেশেরই অধিবাসী তা মানতে তারা নারাজ।

প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আট হাজার ৩২ জনের তালিকা পাঠানো হলেও মিয়ানমার এ থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে নিতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের পয়লা মার্চও সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ শুরু করে মিয়ানমার। এতে করে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পরে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমেই তার সমাধান করা হয়।

এ দিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারে মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার আদৌ আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে। প্রথম ধাপে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যে আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল, তা থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে মেনে নিয়েছে মিয়ানমার।

এরপর থেকে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কার্যক্রমের আর কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। অন্য দিকে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি মিয়ানমার সরকার না মানা পর্যন্ত রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরবে না বলে জানিয়েছেন।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে