কঠিন প্রশ্নের মুখে ফ্রান্স-রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েকদিন আগে, সিরিয়ায় রাক্কা ও ইদলিব শহরে আইএস-এর ঘাঁটিতে রাশিয়া ও ফ্রান্সের বিমানের বোমাবর্ষণের সময় 'হোয়াইট ফসফরাস' ব্যবহার করা হয়৷ এই খবর দিয়েছেন সিটিজেন জার্নালিস্টদের একটি দল ও রাষ্ট্রপুঞ্জের অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল ওয়েপনস এর সমীক্ষকরা৷ রয়টার্সের বরাদ দিয়ে টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর জানানো হয়।
১৯২৫ সালে স্বাক্ষরিত জেনেভা প্রোটোকল ও ১৯৯৭ সালের কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন অনুসারে অস্ত্র হিসাবে 'হোয়াইট ফসফরাস 'এর ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ এর পাশাপাশি, ব্রিটেনে অবস্থিত পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজার্ভেটরি ফর হিউমান রাইটস জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর, পর্যন্ত রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৪০৩ সাধারণ মানুষ৷ এদের মধ্যে ৯৭ জনই শিশু৷
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত বিমান থেকে ছোড়া ব্যারেল বোমায় নিহতের সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের কাছাকাছি৷ এদের মধ্যে ১৪৩৬ জন শিশু৷ অন্য দিকে, আর একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউমান রাইটস জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর রুশ বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৫২৬ জন সাধারণ নাগরিক৷ এদের মধ্যে রয়েছে ১৩৭ জন শিশুও৷ সিরিয়ার যে সব অঞ্চলে রুশ বিমান বোমাবর্ষণ করে, সেই অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে আলেপ্পো, দামাস্কাস, ইদলিব, লাতাকিয়া, হামা, রাক্কা, হোমস ও দেইর-আজ-জোর৷
গত ১৩ নভেম্বর, ইদলিবে পরপর বিমানহানায় বহু অসামরিক মানুষজন মারাত্মক ভাবে আহত হন৷ এই বিষয়ে সমাজকর্মী আহমেদ বলেন, 'বোমা ছোড়া মাত্র সারা আকাশ আলোয় আলো হয়ে যায়৷ সেটি মাটিতে পড়ার পর সব কিছুতে আগুন ধরে যায়৷ হোয়াইট ফসফরাস ব্যবহৃত হলেই একমাত্র এটা সম্ভব৷ 'রাক্কার সিটিজেন জার্নালিস্টরা জানিয়েছেন, ২২ নভেম্বরের বিমানহানার সময়ও ওই নিষিদ্ধ পদার্থটি ব্যবহার করা হয়৷ তাদের মতে , এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সেখানে সাধারণ মানুষের মৃত্যুমিছিল অবধারিত৷
আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যুদ্ধক্ষেত্র আলোকিত করতে অথবা সেনাবাহিনীর চলাফেরার উপর সাধারণ মানুষ বা শত্রুর নজর এড়িয়ে ধেয়ার পর্দা তৈরি করতে হোয়াইট ফসফরাস ব্যবহারে কোনও বিধিনিষেধ নেই৷ কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা অথবা শত্রুপক্ষের উপর সরাসরি আক্রমণে এর অগ্নিসংযোগ করে এর ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ৷ এর কারণ হল হোয়াইট ফসফরাস একটি দাহ্য পদার্থ ও অত্যন্ত বিষাক্ত৷ মনুষ্যদেহের সঙ্গে এর যোগাযোগ হলে চামড়া ও হাড় পুড়ে গিয়ে জীবনসংশয় হতে পারে৷ বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সঙ্গে ফসফরাসের রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে তাপমাত্রা উঠে যায় ৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ এর সঙ্গে তৈরি হয় উজ্জ্বল আলো ও জমাট রাসায়নিক ধোঁয়া৷
কিন্তু প্রয়োগবিধির ফাঁকে সুযোগ নিয়েই ২০০৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী ইরাকের ফালুজাহ-তে ওই পদার্থটি ব্যবহার করে৷ এর আগে ১৯৯৪ সালে, চেচেনিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গ্রোজনির যুদ্ধে একই কাজ করে রাশিয়া৷
যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ একশো বছর ধরে চলে আসছে৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, ১৯১৫ সালে, জার্মানি বেলজিয়ামে মিত্রশক্তির উপর ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করে৷ ১৯১৮ সালে ওই যুদ্ধ শেষ হলে দেখা যায় ক্লোরিন, ফসজিন ও মাস্টার্ড গ্যাস প্রয়োগের ফলে দু'পক্ষে হতাহতের সংখ্যা ৯০ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷
এর পর, ১৯৩৫ সালে ইতালি জেনেভা প্রোটোকল অগ্রাহ্য করে আবিসিনিয়ার সেনাবাহিনীর (অধুনা ইথিওপিয়া) উপর মাস্টার্ড গ্যাস প্রয়োগ করলে নিহত হন ১৫ হাজার সেনা৷
১৯৬৫ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকা নাপাম ও এজেন্ট অরেঞ্জ নামে দুটি রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে৷ প্রথমটিতে মানুষ পুড়ে মারা যেত৷ দ্বিতীয়টি উর্বর শস্যক্ষেত্রকে পরিণত করতো বন্ধ্যা জমিতে৷ এই যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ছবি 'অ্যাপোক্যালিপস নাও' এর এক চরিত্র, লেফটেন্যান্ট কর্নেল বিল কিলগোর বলেছিলেন, 'সকালবেলা নাপাম-এর গন্ধ বড় ভাল লাগে৷'
১৯৮০ থেকে ১৯৮৮, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় কুর্দী অধ্যুষিত হালাবজা শহরে সাদ্দাম হোসেনের আদেশে সারিন ও টাবুনের মতো নার্ভ গ্যাস ও মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহূত হলে মৃত্যু হয় পাঁচ হাজার নিরীহ মানুষের৷ সংবাদসংস্থা বিধ্বংসী প্রথমে আকাশ আলোয় আলো, তার পরই সর্বত্র আগুন৷ সিরিয়ায় সাদা ফসফরাস বোমা রাশিয়া, ফ্রান্সেরজেনেভা প্রস্তাব উড়িয়ে বোমায় সাদা ফসফরাস প্রথমে চার দিক আলোয় আলো৷ তার পর ওই বোমা যেখানে পড়ে সেখানেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন৷ ওই আগুন আর নিভতে চায় না৷ একমাত্র হোয়াইট ফসফরাস ব্যবহার করা হলেই এমন হতে পারে।
২৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�