শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮, ১২:৪৮:১৪

জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে এরদোগান

জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে এরদোগান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ২৪ জুন। জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে এরদোগান। একই দিন পার্লামেন্ট নির্বাচনও হবে। নানা কারণে তুরস্কের নির্বাচনের দিকে আগ্রহ এখন সারা বিশ্বে। প্রথম বিশ^যুদ্ধের পর থেকে যে তুরস্ক ছিল সব ধরনের আলোচনার বাইরে, এখন সেই দেশটিই সবার মনোযোগের কেন্দ্রে।

বিশেষ করে মুসলিম বিশে^ দেশটির বর্তমান অবস্থান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সিরিয়া সঙ্কটই হোক কিংবা কুর্দি সমস্যা কিংবা রোহিঙ্গা মুসলিমদের জটিলতা সব স্থানেই তুরস্ক বিশেষভাবে উপস্থিত হচ্ছে। আর তা হচ্ছে রজব তাইয়েপ এরদোগানের জন্য। সেই তিনিই এবারের নির্বাচনের মধ্যমণি। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন এই নির্বাচনে।

তার জয় মানে তুরস্কের সাম্প্রতিক সময়ের নীতি অব্যাহত থাকা। তিনি হেরে যাবেন, এমন কথা কেউ কল্পনাও করছে না। কিন্তু তবুও তেমন কিছু যদি ঘটে, তবে তুরস্কের নীতিতে আসবে বিপুল পরিবর্তন। তাতে পুরো বিশে^র সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে। আর এরদোগানের জয় মানে বর্তমান নীতি অব্যাহত থাকা।

দেশটিতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন। আগামী বছরের নভেম্বরে হওয়ার কথা ছিল এ নির্বাচন। তবে ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির নেতা ডেভলেট বাহচেলির আগাম নির্বাচনের দাবিটি লুফে নিয়ে সরকার প্রায় দেড় বছর আগেই ভোটাভুটির আয়োজন করতে যাচ্ছে।

সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের হাতেই এখন তুর্কি সরকার পরিচালনার নির্বাহী ক্ষমতা। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ। তবে বিরোধী দলের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে আগেভাগেই তা হচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর পদটি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। পুরো ক্ষমতা ন্যস্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্টের হাতে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী চারজন। এরদোগান হলেন পিপলস অ্যালায়েন্সের প্রার্থী। আর তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হলেন মোহারেম ইনস। পার্লামেন্ট সদস্য এই কট্টর সেকুলার ব্যক্তি এরদোগানের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার।

প্রায়ই এরদোগানের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত কথা বলে থাকেন। এ ছাড়া পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে সাবেক কারারুদ্ধ চেয়ারম্যান সালাহাত্তিন ডেমেরিতাসকে। অপর প্রার্থী হলেন মেরাল আকসেনার। তিনি হলেন আইয়ি পার্টির নেতা।

এরদোগানের বিরুদ্ধে চারজন প্রার্থী হলেও তারা কিন্তু পার্লামেন্ট নির্বাচনে একসাথে করার জন্য জোটবদ্ধ হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি বা সিএইচপির নেতা বুলেন্ত তেজকান এরদোগানের বিরুদ্ধে জোট গড়ার ঘোষণা দেন। তার দলের সাথে থাকবে জাতীয়তাবাদী গুড পার্টি, ফেলিসিটি পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এসব দল সংসদ নির্বাচনে এরদোগানের দলকে দুর্বল করতে চায়।

এক বিবৃতিতে নতুন জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিন্ন চিন্তা ও মতের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ফলে তুরস্কের গণতান্ত্রিক নীতিতে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা আসবে।

►এরদোগানের ক্ষমতা বাড়ানোর নির্বাচন

এ নির্বাচনের মাধ্যমে এরদোগানের ক্ষমতা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আইন জারি করতে পারবেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন ও বাজেট প্রস্তুত করতে পারবেন। মন্ত্রী, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতাও প্রেসিডেন্টের হাতে। গত বছর সংবিধান সংশোধন নিয়ে যে গণভোট হয়েছিল, তাতে এরদোগান সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন।

এবারের নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক হলো এরদোগানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও আগে কখনো আগাম ভোটের দিকে পা বাড়ায়নি। অনেকেই মনে করছেন, সিরিয়া ইস্যুর কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরদোগান।

সিরিয়ায় বিদ্রোহী কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযানের ফল শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, কেউ বলতে পারে না। তা ছাড়া যুদ্ধের রয়েছে বিপুল ব্যয়। যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে প্রবল চাপ পড়ে। আর তা ভোটের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সিরিয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ভালো অবস্থায় আছে। এই সুফলটুকু দ্রুত কাজে লাগাতে চাইছেন এরদোগান।

নির্বাচনে কী কঠিন অবস্থায় পড়তে হতে পারে এরদোগানকে? কোনো কোনো জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রথম রাউন্ডে জয়ের জন্য তার ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া কঠিন হবে তার জন্য। তবে তিনি এখনো তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।

দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ঠিকই জয়ী হতে পারবেন। তা ছাড়া এ মুহূর্তে তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো। যুদ্ধের ব্যয় এখনো অর্থনীতিকে তেমনভাবে আঘাত করতে পারেনি। ফলে ভোটাররাও তার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতাসীন দলটি প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে আসছে। একে পার্টি ২০০২ সালে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে প্রথমবার ক্ষমতাসীন হয়; আসন পেয়েছিল ৩৬৩টি, ২০০৭ সালে ৩৪১, ২০১১ সালে ৩২৭ এবং ২০১৫ সালের জুন মাসের নির্বাচনে ২৫৮টি আসন।

সর্বশেষ নির্বাচনেও ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় একে পার্টি। অপর দিকে, প্রধান বিরোধী দল বামপন্থী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ২০০২ সালে ১৭৮টি, ২০০৭ সালে ১১২টি, ২০১১ সালে ১৩৫টি, ২০১৫ সালের জুনের নির্বাচনে ১৩২টি আর সর্বশেষ নির্বাচনে ১৩৪টি আসনে বিজয়ী হয়।

এবারের নির্বাচনেও এরদোগানের দল সহজে জিতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে