ধনী দেশগুলোকে দায়ী করে যা বললেন মোদি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উন্নত দেশগুলির সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের 'যুদ্ধে' নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় বললেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের করা নয়৷ এটা শিল্পায়নের যুগে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফল৷ অথচ, আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল ভুগতে হচ্ছে৷ সেই কারণেই প্যারিসের আলোচনা এত গুরুত্বপূর্ণ৷' টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে।
সোমবার প্যারিসে সম্মেলনের প্রথম দিন চিনের প্রধানমন্ত্রী জাই জিনপিংও মোদির সুরেই কথা বলেন৷ তার বক্তব্য ছিল, পৃথিবীকে গ্রিন হাউস গ্যাসের থাবা থেকে বাঁচাতে উন্নত দেশকেই মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে৷ উন্নত দেশগুলি যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য করে, তার হয়েও কথা বলেন জিনপিং৷ তার দাবি, ২০২০ সাল থেকেই অর্থসাহায্য দিক উন্নত দেশগুলি৷ এবং তার পরও যেন তা চালিয়ে যাওয়া হয়৷
২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনেও একই দাবি উঠেছিল৷ কিন্তু গরিব দেশগুলি এখনও প্রতীক্ষায়৷ জিনপিং সেই দাবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মাত্র৷ বরং, অনেক চড়া গলায় উন্নয়নশীল দেশের হয়ে কথা বলেনছেন মোদি৷ আমেরিকার মতো উন্নত দেশকে কটাক্ষ করে মোদির মন্তব্য, 'কিছু মানুষের জীবনযাত্রার জন্য অন্যের সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে না৷'
উন্নত দেশগুলিকে 'মিলে চলার' অনুরোধও করেন তিনি৷ প্রসঙ্গত, সম্মেলন শুরুর আগে আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরি ভারতকে 'অন্যতম চ্যালেঞ্জ' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন৷ অথচ, তারই দেশের একজন বাসিন্দা একজন ভারতীয়ের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি বিদ্যুত্ ব্যবহার করেন৷ মোদি সেই 'জীবনযাত্রা'কে কটাক্ষ করে বুঝিয়ে দিলেন, উন্নয়নশীল দেশকে কার্বন নির্গমন কমাতে বলার আগে আমেরিকা যেন নিজের ঘরে নজর দেয়৷
সম্মেলনের প্রথম দিনে ১৪৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন৷ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বারাক ওবামা, ফ্রাঁসোয়া অল্যাঁদ, অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ভ্লাদিমির পুতিনের মতো বড় বড় নেতারা৷ সম্মেলনের মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল উন্নত বনাম উন্নয়নশীল দেশের বিতর্কের জন্য৷ প্যারিসের জন্য বেরোনোর আগে 'মন কি বাত'-এর অনুষ্ঠানেই এসব কথা বলে গিয়েছিলেন মোদি৷ প্যারিসে পৌঁছে তার মুখ থেকে বাহির হয় সেই কথারই আগুন ঝরানো জলক।
জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা উল্লেখ করতে গিয়ে ঋগ্বেদ থেকে মহাত্মা গান্ধী পর্যন্ত টেনে এনেছেন মোদি৷ আশ্বাস দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক জোটের হাত ধরে ভারতের প্রচেষ্টা নতুন উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাবেন৷ এমনিতেই ২০২০ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে ভারত৷ মোদি এ দিন ঘোষণা করেন, ২০১৬ সালের মধ্যেই ১২ গিগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করবে ভারত, যা চলতি সক্ষমতার তিন গুণ৷
মোদির আশ্বাস, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে উত্পাদিত শক্তির ৪০ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই উত্পাদন করা হবে৷ এ দিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অল্যাঁদের সঙ্গে যৌথ ভাবে 'ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স'-এর শুভসূচনা করেন মোদি৷ ১২১টি সূর্যরশ্মি-সমৃদ্ধ দেশ এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে৷ এতে যেমন বহু গ্রামে বিদ্যুত্ পৌঁছবে, তেমনই গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের হারেও রাশ টানা সম্ভব হবে৷ এ দিন প্যারিসে ভারতের প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করেন মোদি৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর, পীযূষ গয়ালও৷ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ভারত কী করছে, তাই বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে৷ জাভরেকর জানান, প্রায় ২১ গিগাবাইটের ৪০টি ফিল্ম দেখানো হচ্ছে প্যাভিলিয়ন থেকে৷
রবিবার 'মন কি বাত'-এ চেন্নাইয়ের বন্যার প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন মোদি৷ এ দিনও বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে মোদি জলবায়ু পরিবর্তনকে 'গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ' হিসেবে বর্ণনা করেন৷ তিনি বলেন, 'আমাদের চরম দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ আমরা সুসংহত, সমদায়িত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি চুক্তি চাই প্যারিস থেকে৷'
১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�