বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:০৬:৪৭

বাবা দাঁত ভেঙে দিলেও পড়া ছাড়েনি সাজিনা

বাবা দাঁত ভেঙে দিলেও পড়া ছাড়েনি সাজিনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল বছর বারোর ছোট্ট সাজিনা৷ অভাবের সংসারে পড়ার খরচ জোগাড় করতে জরির কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল সে৷ কিন্ত্ত সেটা মেনে নিতে পারেননি পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবা৷ অভিযোগ, দিনের পর দিন মেয়েটিকে মারধর করে উপার্জনের সামান্য টাকাগুলোও কেড়ে নিতেন বাবা মোবারক বৈদ্য৷ সোমবার সকালে স্কুলের পরীক্ষার জন্য হঠাত্‍ করে প্র্যাক্টিক্যাল খাতা ও পেনসিল কেনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীর৷ সেগুলো কেনার জন্য বাবার কাছে মাত্র ২০ টাকা চেয়েছিল সাজিনা৷ ক্ষিপ্ত মোবারক বেধড়ক মারধর করে সাজিনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ৷ কিন্ত্ত মোবারকের প্রতিনিয়ত নির্যাতনে বাদ সাধল মেয়ের জেদ ও তার স্কুলের সহপাঠীরা৷ বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে। রাতেই রাস্তা থেকে সহপাঠীরা জখম সাজিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে স্কুলে৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় চিকিত্‍সার পর আপাতত সুস্থ সাজিনা৷ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় আলোড়ন ছড়ায় এলাকায়৷ এরপরই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন মোবারক৷ এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ছাত্রীর মুখে নির্মম ঘটনার কথা শোনার পর বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে ডেকেছিলাম৷ কিন্ত্ত তিনি স্কুলে আসেননি৷ সাজিনার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্কুল সবসময় পাশে থাকবে৷ মথুরাপুরের লালপুরের বাসিন্দা সাজিনা কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী৷ তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সে৷ ছোট থেকেই মেধাবী৷ বাড়ির মেয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়াশোনা করুক তা কখনোই মানতে পারেননি মোবারক৷ অভিযোগ, ক্লাস ফাইভ থেকেই পড়াশোনা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগেন বাবা৷ শুরু হয় ছোট্ট মেয়েটার উপর নির্মম অত্যাচার৷ সাজিনার পড়াশোনার খরচ পর্যন্ত বন্ধ করে দেন তিনি৷ তাতে এতটুকুও বিচলিত হয়নি সাজিনা৷ অভাবের সংসারে নিজের পড়াশোনার খরচ তুলতে জরির কাজ শুর করে সে৷ অভিযোগ, ঘুসি মেরে সাজিনার দাঁত ভেঙে দেয়া, মাথা ফাটিয়ে দেয়া ছিল মোবারকের রোজকার ব্যাপার৷ তাতেও দমেনি সাজিনা৷ দিনের পর দিন বাবার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আর বাড়িতে ফিরতে চায় না সে৷ পড়া চালিয়ে যেতে স্কুলের হস্টেলে থাকতে চায় সাজিনা৷ ঘটনার পর থেকে বাবা খোঁজও নেননি মেয়ের৷ বুধবার লালপুরের বাড়িতে গিয়ে সাজিনার বৃদ্ধা ঠাকুমা ছাড়া খোঁজ মেলেনি কারো৷ বৃদ্ধা যসিমন বেওয়াও নাতনির ওপর ছেলের অত্যাচারে বীতশ্রদ্ধ৷ বললেন, খাতা-পেনসিল কেনার জন্য সামান্য ক'টা টাকা চেয়েছিল মেয়ে৷ তাই মারধর করে ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে বাবা৷ সে চায় পড়া বন্ধ করে মেয়ে বাড়িতেই থাকুক৷ আমি প্রতিবাদ করলেও ছেলে কথা শোনে না৷ দিনের পর দিন এই নির্যাতন সহ্য করতে পারছিলাম না৷ আমি চাই, সাজিনা স্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করুক৷ কান্নাভেজা গলায় সাজিনা বলে, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আমি পড়াশুনা করি, বাবা সেটাও সহ্য করতে পারতেন না৷ আগেও মেরে দাঁত ভেঙে, মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল৷ এমনকি পড়ার খরচ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় বাবা৷ সে জানায়, তাই জরির কাজ করতাম৷ সেই টাকাগুলোও মারধর করে কেড়ে নিত৷ খাতা-পেনসিল কেনার জন্য ২০ টাকা চাওয়ায় আমাকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে বাবা৷ আমি আর বাড়িতে ফিরব না৷ হোস্টেলে থেকে পড়ালেকা চালিয়ে যেতে চাই৷ ৩ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে