আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই একের পর এক চমক উপহার দিয়ে চলেছেন ইমরান খান। তবে দেশীয় রাজনীতিতে সফলতা পেলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কাঠখড় পোড়াতে হবে তাকে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রকে সামলানোর গুরুভারটা না হয় আপদত বাদই দেওয়া যাক, তবে ইসলামপন্থীদের সহানুভুতি আর সেনাবাহিনীকে পুঁজি করে ক্ষমতায় আসা ইমরানের নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইসলামি দুটি রাষ্ট্র- রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। পরষ্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই মুসলিম দেশ সৌদি আরব ও ইরান- এর মধ্যে কাকে বেছে নেবেন তিনি? এমনই এক প্রশ্ন রেখে একটি নিবন্ধ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যম আল আরাবিয়া নিউজে।
নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমান সময়ে বিশ্বরাজনীতিতে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এটি। দেশটির হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তান রয়েছে বিশ্বের সেরা শক্তিধর দেশের তালিকায়। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক বেশ পুরনো। আবার রিয়াদের সঙ্গেও দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক ঊষ্ণই রয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সৌদি আরব ইরানকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। ইমরান খান ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন। দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইমরান খান ইরান ছাড়াও সম্প্রতি তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তুর্কিদের তিনি ভাই হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি তুরস্কের মুদ্রা লিরার সংকট মোকাবেলায় তার দেশের অনেকেই লিরাও কিনেছেন।
প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানে শাসক যিনিই হোন না কেন সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই অত্যন্ত গভীর ও দৃঢ়। বিশেষ করে সৌদি আরবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছে। দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য যোগাযোগও অনেক বড়। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগ আসে সৌদি আরব থেকে।
কিন্তু সৌদি আরব ও ইরানের সংঘাতের কারণে পাকিস্তান উভয় সংকটে রয়েছে। ইরানের সঙ্গে তিনি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটালে সৌদি আরব তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশটির বিশাল সংখ্যক প্রবাসীদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, বর্তমান সময়ে তেহরান তার পররাষ্ট্র নীতিসহ নানা ইস্যুতে ব্যাপক বদল এনেছে, যা সন্ত্রাসের সহায়ক। এমন অবস্থায় তেহরানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে ইসলামাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আর এর মাধ্যমে দেশটি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায়ও নামতে পারবে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সৌদির পররাষ্ট্র নীতির পক্ষ নিলে ইসলামাবাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলেও উল্লেখ করা হয়। পাকিস্তান যদি তেহরানের উপর চাপ প্রয়োগে ভূমিকা রাখে সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির লোকবলের কদর আরও বাড়বে।
কিন্তু চীনমুখী পররাষ্ট্রনীতির কারণে আবার ইমরান খান দোটানায় পড়ে যেতে পারেন। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আবার যুক্তরাষ্ট্রর বিরুদ্ধে জোট বেধেছে ইরান-তুরস্ক-রাশিয়া চীন। যার ফলে এক জটিল সমীকরন তৈরি হয়েছে।
এখন দেখার পালা ইমরান খান, কোনটাকে বেছে নেন।