ইঁদুর-বিড়াল-ছারপোকার দাপটে নাজেহাল রোগীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ট্যাংরার মালতী, কালিয়াচকের রেহানা কিংবা বনগাঁর তাবাসুমের যেন এক বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা৷ সন্তানের চিকিৎসার নিতে সাপ্তাহ খানেকের জন্য ভর্তি হতেহয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মা ও শিশু বিভাগে। আর সেখানে ভর্তি হয়ে নিত্যদিন বিড়াল, ছারপোকা ও ইঁদুরের মাঝে থাকাটাই অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন এঁরা সকলে৷ সন্তানরাও এই পরিস্থিতি মেনে নিয়েছেন৷ টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে।
ইঁদুর-বিড়াল এখন তাদের নতুন বন্ধু৷ শুধু তাই নয়, 'বোনাস' হিসেবে ভেন্টিলেটরও বিকল হয়ে পড়েছে৷ শিশু ইমার্জেন্সিতে রীতিমত নোটিস দিয়ে রোগীর পরিজনদের অবগত করা হয়েছে, বিভাগে কোনও ভেন্টিলেটরই নেই৷ যা রয়েছে সেগুলি সমস্তই অকেজো-'আউট অফ অর্ডার'৷
এ চিত্র কোনও সদ্য মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হওয়া প্রত্যন্ত জেলা হাসপাতালের দৃশ্য নয়৷ এটাই বাস্তব এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু শল্য বিভাগে৷ বছরখানেক আগেই বহু টাকা ব্যয় করে কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজের এই বিভাগটি বিশেষ ভাবে সংস্কার করে উদ্বোধন করা হয়৷ হইহই করে চালু করা হয় বিশেষ সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ), নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু), পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) ও পেডিয়াট্রিক অপারেশন থিয়েটার৷ দাবি করা হয়, রাজ্যের শিশু চিকিৎসার অন্যতম সেরা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে এটি৷
এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সেন্টিনারি বিল্ডিং-এ শিশু চিকিৎসার বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে৷ ছ'তলায় রয়েছে শিশুদের মেডিসিন বিভাগ৷ সেখানে সাধারণ বেডের পাশাপাশি রয়েছে এনসিইউ, নিকু এবং পিকু৷ মোট বেডের সংখ্যা শতাধিক৷ সাত তলায় রয়েছে শিশু শল্য বিভাগ৷ মেডিসিন বিভাগের হাল বেশ ঝকঝকে হলেও, শিশু শল্য বিভাগের হাল অন্য রকম৷ এখানে একশোর কাছাকাছি বেড থাকলেও রোগীর ভিড় এত বেশি যে, একটি বেডে একাধিক শিশু রেখেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি৷ বেড সঙ্কুলান না হওয়ায় মেঝেতেই তোষক পেতে ঠাঁই নিতে বাধ্য হচ্ছে বহু হতভাগ্য শিশু৷ যে কোন দিন শল্য চিকিৎসা বিভাগের ওয়ার্ডে গেলে দেখা যাবে, শুয়ে আছে চিকিৎসাধীন শিশু এবং মায়েরা৷ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই নজরে আসবে, অসুস্থ শিশু ও মায়েদের আশপাশে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে ইঁদুর-বিড়াল৷ মায়েদের অভিযোগ, ইঁদুর-বিড়াল তা-ও চোখে দেখা যায়৷ কিন্তু তোষকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছারপোকা তো আর দেখা যায় না৷ তাদের কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হয় শিশুদের৷ আলো নেভালেই দাপট বাড়ে তাদের৷ রোগীর পরিজন তমাল দাসের অভিযোগ, 'হাসপাতালের পক্ষ থেকে নিয়মিত চাদরও বদলানো হয় না৷ আমরাই বাড়ি থেকে চাদর নিয়ে আসি৷'
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, এর থেকে বড় আতঙ্ক হচ্ছে শিশু জরুরি বিভাগের একটি বিশেষ নোটিস৷ সেই নোটিসে লেখা রয়েছে- শিশু শল্য বিভাগে কোনও ভেন্টিলেটর নেই৷ সবকটিই বিকল৷ সূত্রের খবর, অপারেশন থিয়েটারে শিশুদের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হলেই অন্য বিভাগ থেকে ভেন্টিলেটর 'ধার' করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে৷ বিভাগের তরফ থেকে নিয়মিত মেরামতির জন্য চিঠি পাঠানো হলেও কাজের কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ৷ রোগীর পরিজনদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে এই নোটিস সাঁটিয়েছেন ডাক্তাররা৷ কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে, মৃত্যুর হাতছানি এত কাছে জেনেও প্রায় নিরুপায় হয়েই শত শত শিশুদের পরিবার চিকিৎসা করাতে আসতে বাধ্য হচ্ছেন৷
বিভাগীয় প্রধান সৌমিত্র কুমার বিশ্বাস ফোনে পুরো বিষয়টি শুনে বলেছেন, 'আমি সরকারি কর্মচারী৷ এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না৷' কলেজের উপাধ্যক্ষ শেখ আলি আমাম বলেন, 'বিভাগীয় প্রধান বলেছেন, একটি ভেন্টিলেটর সচল আছে৷ বাকিগুলো মেরামতি করা হচ্ছে৷ কিন্তু নোটিসের বিষয়ে খোঁজ নেব৷'
৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�