রামায়ণী হনুমান সেতু ভারত মহাসাগরে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মা সীতাকে উদ্ধারের জন্য কিষ্কিন্ধ্যা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সাগরে পাথর ফেলে সেতুবন্ধন করেছিলেন বীর হনুমান। সেই পথ ধরেই বানরসেনা নিয়ে রাবণের দর্পিত নগরী লঙ্কায় প্রবেশ করেছিলেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ও লক্ষ্মণ। রামায়ণের কল্যাণে এই ঘটনার বিষয়ে সকলেই অবগত।
সেই সেতুবন্ধনের ঐতিহ্য অনুসরণ ধরেই একবিংশ শতাব্দীতে ভারত-শ্রীলঙ্কা দুই দেশের মধ্যে ভারত মহাসাগরের উপর তৈরি হবে ১৯ মাইল দীর্ঘ সেতু। যেহেতু বীর হনুমানই রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র, যেহেতু লঙ্কাপুরী থেকে তাঁর তুলে আনা ব্রহ্মাস্ত্রেই রামচন্দ্র রাবণ বধ করেছিলেন, তাই এই সেতুর নাম রাখা হচ্ছে ‘হনুমান সেতু’।
ভারত মহাসাগরে পক প্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। চলতি বছরের মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে পক প্রণালীর উপরে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দশক আগে একই ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কার তরফ থেকে। সেই সময় দিল্লিতে ছিল ইউপিএ জোটের সরকার। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের কিছু শরিক দলের বিরোধিতায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেই সেতু তৈরির প্রস্তাবের কথা এগোয়নি। শ্রীলঙ্কা সরকার সেই সময় এলটিটিই-র বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। এই যুদ্ধে সেদেশের সংখ্যালঘু তামিল সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এই অভিযোগে তখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিরোধিতা করে ইউপিএ জোটের দক্ষিণ ভারতীয় শরিক দলগুলি, বিশেষ করে করুণানিধির ডিএমকে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি আর নেই। দিল্লিতেও বদল ঘটেছে সরকারের। সেতু নির্মাণে একমত হয়েছে দিল্লি এবং কলম্বো। এই হনুমান সেতু নির্মাণের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পরিবহণ মন্ত্রী নীতীন গড়করি।
'হনুমান সেতু' তৈরি হলে ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে আন্তঃসংযোগ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হবে। সেইসঙ্গে বিদেশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষিণ উপকূলবর্তী বন্দরগুলির উপর মারাত্মক চাপ থাকায় অনেক সময়েই কলম্বো বন্দর ব্যবহার করতে হয় ভারতীয় রফতানিকারকদের। এর ফলে খরচও অনেক বেড়ে যায়। পক প্রণালীর উপরে হনুমান সেতু নির্মিত হলে সেই সমস্যা থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�