বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০১:৩১:৪৯

জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্য শুনে সবাই হাসছে

জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্য শুনে সবাই হাসছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুরনো একটা টুইট। ঠিক চার বছরের মাথায় সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য। তখনও অবশ্য ট্রাম্প শুধুই ধনকুবের। চুটিয়ে ব্যবসা করছেন, আর একটু একটু করে ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। ২০১৪ সালের আগস্টের। জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্যে শুনে সবাই হাসছে। 

বারাক ওবামার সমালোচনা করতে গিয়ে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট দরকার, যিনি বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র হবেন না।’ অথচ মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৭৩ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে হাসির রোল উঠল, ডায়েসের সামনে তখন দাঁড়িয়ে ট্রাম্পই।

নিজের গুণ গাইতে গিয়েই লোক হাসালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আধা ঘণ্টা দেরিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় এসে পৌঁছান ট্রাম্প। পরনে কালো স্যুট, লাল টাই। বুকে ব্যাজ- মার্কিন পতাকা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলে বসেন, ‘দক্ষতা ও ক্ষমতার বিচারে আমাদের সেনা এখন সর্বকালের সেরা। আর তা ছাড়া দু’বছরেরও কম সময়ে আমার সরকার যা করেছে, আমেরিকার ইতিহাসে কোনও প্রশাসনই তা করতে পারেনি।’

টেলি-প্রম্পটার দেখে বলছিলেন ট্রাম্প। পুরো বাক্যটাও তখনও শেষ হয়নি, হঠাৎ শোনা গেল হাসির রোল। ব্যাপার কী! ক্যামেরা রোল করতেই নজরে এল, মুখ টিপেও হাসছেন অনেকে। এমনটা ওবামার ক্ষেত্রে কখনও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ। তারা বলছেন, ‘ট্রাম্পই ফার্স্ট। গত বার এই সভায় হুঙ্কার দিয়ে তিনি চমকে দিয়েছিলেন বিশ্ব নেতাদের। এ বার নিজেই হাসির খোরাক হলেন।’

পোডিয়ামে স্পষ্টতই অপ্রস্তুত দেখায় ট্রাম্পকে। খানিক পরে বলেন, ‘এমন প্রতিক্রিয়া আশা করিনি, তবে ঠিক আছে।’ পরে সাংবাদিকদেরও জানান, ব্যাপারটাকে তিনি সহজ ভাবেই নিয়েছেন। কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, ট্রাম্প এতটা সরল নন। নানাবিধ কারণে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এমনিতেই আমেরিকার অবস্থান এখন নড়বড়ে। এই হাসির রেশ সেই জল আরও ঘোলা করবে বলেই আশঙ্কা তাদের।

আত্মপ্রচারে ট্রাম্প আগেও এভাবে বহু বার উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে ঠাসা প্রচারনা সভায়। সেখানে হাততালিই পেয়েছেন। এখানে ঘটল উল্টা। বক্তৃতার একটা সময়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জার্মানি এখনই নিজেদের কৌশল না-বদলালে, জ্বালানির ব্যাপারে তাদের রাশিয়া-নির্ভর হতে হবে।’ এর প্রতিক্রিয়াতেও জার্মান প্রতিনিধিদের মুখ চেপে হাসতে দেখা যায়।

তবে ট্রাম্প যেভাবে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ধারণাকে নস্যাৎ করে মার্কিন সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে প্রচুর। তার কথায়, ‘আমেরিকা চালাবে মার্কিনরাই।’

সবুজ মার্বেলের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে ইরানকেও একহাত নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার দাবি, ইয়েমেন এবং সিরিয়ায় ‘রক্তপাতের কর্মসূচি’ চালাচ্ছে তেহরান। ইরানবিরোধী জোটে শামিল হওয়ার ডাক দেন বাকি বিশ্বকে। এ নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোকে অবশ্য সরাসরি জবাব দিতে শোনা যায়। ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার মতো ট্রাম্পের নানাবিধ গা-জোয়ারি সিদ্ধান্তে বিশ্বে সংঘাত আরও বাড়বে বলেই মন্তব্য করেন তিনি।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও সুর চড়ান ম্যাঁক্রো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘জলবায়ু চুক্তিতে সমর্থন আছে কি না; তা জেনেই কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে ফ্রান্স।’ আনন্দবাজার।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে