আর খিলখিলিয়ে হাসবে না সেই ছোট্ট রাঘাত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রাণখোলা নিষ্পাপ মেয়েটির খিলখিলে হাসি। এই হাসির কারণ, সে মামার বাড়ি বেড়াতে এসে মামার কাছ থেকে উপহার পেয়েছে একটা নতুন ব্রেসলেট। আর পছন্দের রঙের নেলপলিশ লাগালেও মা কিছুই বলেনি। তাই খুবই খুলি ছোট্ট রাঘাত। দুরন্ত পায়ে সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়ানো৷ কখনো বছর দেড়েকের ছোট বোনকে গিয়ে চুমু খাওয়া আবার কখনো চার বছরের ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটি যেন লেগেই রয়েছে তার৷ পাঁচ বছরের এই নার্সারি পড়ুয়া মেয়েটি এমনই দূরন্ত প্রকৃতির৷ টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর জানা যায়।
তবে সেই মেয়েটি এখন একদম শান্ত হয়ে গিয়েছে। যাকে ঘুম পাড়াতে মা সুহিরকে নাজেহাল হতে হত, সে এখন শুধুই ঘুমোচ্ছে৷ মামা আর দাদুর পাশে শুয়ে-কবরে৷ সিরিয়া ও তুর্কির সীমান্ত সংলগ্ন হিবাতেই এখন রাঘাত থাকে৷ মা-বাবা-ভাই-বোনকে ছেড়ে বহু দূরে৷
১ অক্টোবরের সেই সকালটা সুহির কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না৷ পাঁচ বছরের রাঘাত তখন ওই ব্রেসলেটটা পেয়ে দারুণ খুশি৷ তার কিছু ক্ষণ আগেই সে নানি আর খালার সঙ্গে ঈদের বাজার করে ফিরেছে৷ তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শোনা গেল রুশ বোমারু বিমানের আওয়াজ৷ সামনে মারাত্মক বিপদ একথা ভেবে রাঘাতকে কোলে তুলে নিয়ে বাগানের দিকে ছুটলেন তার নানি৷ বাগানে একটা বড় গর্ত করে রাখা আছে৷ বোম পড়লে যাতে সেখানে গিয়ে প্রাণ বাঁচে৷ ওই গর্তে গিয়ে রাঘাতের খালাতো ভাই আহমেদের কোলে তুলে দিলেন তাকে৷ তার পরেই সব অন্ধকার৷ বীভত্স আওয়াজে কেঁপে উঠল বাড়িটা৷
তারপরই যেন সবকিছু এলো-মেলো হয়ে গেল। আর ছোট্ট রাঘাতের অবস্থা দেখে যেই কেউ ভয় পেয়ে যাবে। মাথাটা নিচু করা খুলি ফেটে প্রায় চৌচির৷ ছোট্ট প্রাণটা তখনও ধুকপুক করছে৷ আর আহমেদকে আঁকড়ে ধরে আছে সে৷ আহমেদও হাত দিয়ে আড়াল করে রয়েছেন আদরের বোনকে৷ কিন্তু আহমেদের হাতরূপী সেই ঢালটা যে তেমন শক্তপোক্ত নয়৷ আহমেদের তখন আর প্রাণ ছিল না, তাই ছোট্ট মেয়েকে নিয়েই বাড়ির অন্য এক আত্মীয় দৌড়লেন হাসপাতালে৷ মোটর সাইকেলের পিছনে রাঘাতকে কোলে নিয়ে তার মা৷ আবার বোমার একটি টুকরো এসে লাগল রাঘাতের গায়ে৷ রাঘাত চলে গেল তার প্রিয় 'ফেয়ারি' দের কাছে৷ প্রথম বোমাতেই মারা গিয়েছেন তার খালাতো ভাইও৷
প্রিয় মেয়েকে হারিয়ে যেন কথাই হারিয়ে ফেলেছেন মা সুহির৷ বললেন, 'আমরা ঈদে বেড়াতে এসেছিলাম এখানে৷ ৬ দিনে জন্য একটা বোমা!' আর শেষ করতে পারলেন না কথা৷ ডুকরে কেঁদে উঠলেন সদ্য সন্তানহারা সেই মা৷ রাঘাতের চার বছরের ভাই অবশ্য জানে না মা কেন কাঁদছে৷ আধো গলায় চোখ মুছিয়ে বলছে, 'না, মাম্মা৷' আর ছোট মেয়ে তো বড় বোনকে খুঁজে খুঁজেই সারা৷ দেখতে না পেয়ে কান্না জোড়ে মাঝে মধ্যেই৷
নীল প্যান্ট, লাল গেঞ্জি পরা তিন বছরের আয়লান কুর্দিকে নিশ্চয়ই মনে আছে৷ শিশুর নিথর দেহের সেই ছবি এখন শরণার্থী সমস্যা সমাধানের এক মাত্র মাধ্যম। এ বার এই রাঘাতের খিলখিলে হাসি কি হয়ে উঠবে নিস্ফলা যুদ্ধের প্রতীক?
৬ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�