'তারা মানে ফরাসী, আমরা মানে মুসলিম'
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্যারিসে সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার এক মাস পার না হতেই ফ্রান্সে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন - এবং এ প্রেক্ষাপটে অনেক পর্যবেক্ষক ধারনা করছেন যে, স্থানীয় এ নির্বাচনে অভিবাসী-বিরোধী উগ্র দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভালো করবে।
ফ্রান্সের সার্বিক জনমত জরিপ বলছে, প্যারিস হামলার পর থেকেই ন্যাশনাল ফ্রন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মনে করা হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে দুই থেকে চারটি অঞ্চলে তারা ভালো করবে, যার প্রভাব পড়বে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস সতর্ক করে দিয়েছেন, যেন ভোটাররা ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেত্রী মারিন লু পেনের 'কৌশলের ফাঁদে' পা না দেন।
তবে মুশকিল হলো, মারিন লু পেনের বাবা জঁ মারি লু পেন যখন ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা ছিলেন - তখন এটা 'ন্যাড়ামাথা গুন্ডাদের দল' বলে যে ইমেজ তৈরি হয়েছিল - তা তার মেয়ের সময় অনেক বদলে গেছে।
এখন এই দলে মাথা-কামানো লোক দেখা যায় না, তবে অশ্বেতাঙ্গ লোকও দেখা যায় না। এরা ইহুদিবিদ্বেষী কথাবার্তা বলার ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকেন। তবে ইসলামবিরোধী কথাবার্তা এ দলের নেতানেত্রীদের মুখে প্রায় সবসময় শোনা যায়।
তারা মনে করেন ব্যাপক অভিবাসনের কারণেই ফ্রান্সে উগ্রপন্থী ইসলামের উত্থান ঘটেছে।
ফ্রান্সের ফিলিপ ল্যানসেড নামের একজন ব্যবসায়ী বলছিলেন, আগে তিনি ন্যাশনাল ফ্রন্টে যোগ দেবার কথা ভাবতেই পারতেন না, কিন্তু ১৩ই নভেম্বরের আক্রমণের পর দিনই তিনি এই দলে যোগ দিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় কগোলাঁ শহরের মেয়র মার্ক এতিয়েন লাঁসেদ বলছিলেন, "ইহুদিবিদ্বেষ তার আগের প্রজন্মের ব্যাপার। তবে ইসলামের সমস্যা হলো তারা সারা দুনিয়া জুড়ে শরিয়া কায়েম করতে চায়।"
ফ্রান্সের একটি শহর মার্সেই - যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা আড়াই লক্ষ - সেখানকার একটি মসজিদের ইমাম আবদেররহমান গুল বলছেন, ন্যাশনল ফ্রন্ট সবক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
"শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলিমরা - যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।"
এই বৈষম্যের এর পরিণতিতে যে কোন কিছুই ঘটতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এখানেই একটি নির্বাচনী সভায় মারিন লু পেন ফরাসী আত্মপরিচয়ের উল্লেখ করে বলেছেন, "আমরা জানি আমরা কি এবং কি নই। আমরা কোন ইসলামিক জাতি নই।"
মার্সেই শহরে ফ্রন্ট ন্যাশনালের উত্থানের পর শহর যেন দু'ভাগ হয়ে গেছে। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেছেন, আমরা তাদের এলাকায় যেতে ভয় পাই, তারা এখন আমাদের এলাকায় আসতে ভয় পায়।
এই 'তারা' 'আমরা' কারা?
তিনি বুঝিয়ে দেন - 'তারা' মানে 'ফরাসী' আর 'আমরা' মানে 'মুসলিম'।-বিবিসি
৭, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ