‘রাজা’ বিদায় নিলেন ফকিরের বেশে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মৃত্যু হল ব্রিটিশ আমলের শেষ রাজার। গত সপ্তাহে মৃত্যুই হল রাজা ব্রজরাজ মহাপাত্রের। 'রাজা'র মৃত্যু হল ফকিরের মত। কোনও ঐশ্বর্যের জৌলুস নেই। গ্রামবাসীদের ভালোবাসাতেই শেষ জীবনটা কাটিয়েছেন তিনি। ৩০ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যু হল তার। রাজার পুরো নাম ব্রজরাজ বীরবরা চম্পাতি সিং মহাপাত্র।
ব্রিটিশ আমলে ওড়িশার কটকে ছিল ব্রজরাজের রাজত্ব। ভুবনেশ্বর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তিগিরিয়ার রাজা ছিলেন তিনি। তার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাজস্থানের। ১২৪৬ সালের সেই রাজবংশের অবসান হল।
মৃত্যুর আগে শেষশয্যায় তার শেষ ইচ্ছে ছিল যাতে পুরনো তিগিরিয়ার মানুষের কাছ থেকে ১০ টাকা সংগ্রহ করে এনে তার সমাধিস্থলে রাখা হয়। গ্রামবাসীদের কাছে রাজার থেকেও বেশি পিতৃস্থানীয় ছিলেন ব্রজরাজ। তাকে 'রাজা' নয় 'আজা' বলেই সম্বোধন করা হত তাকে। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন দয়ার হৃদয় ছিল ব্রজরাজের। তার সম্পত্তি খুবই কম থাকা সত্ত্বেও দান-ধ্যানে খামতি ছিল না তার। মৃত্যুর অনেক আগেই তার সম্পত্তি শূন্য হয়ে গিয়েছিল। গ্রামবাসীদের দয়াতেও বেঁচেছিলেন তিনি।
তার একটি রিক্সা ঠিক করা ছিল, তাতে চেপে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। যেখানেই যেতেন সেখানেই সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হত তাকে। মানুষ তাকে অনেক কিছু দিতে চাইলেও তিনি প্রয়োজনের বেশি কখনই গ্রহণ করতেন না। গ্রামবাসীরা তার স্মৃতিতে একটি সৌধ নির্মাণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাইপুরের রাজকুমার কলেজের গভর্নিং বডিতে আজীবনের সদস্যপদ ছিল তার। সেখানের পত্রিকায় লিখতেন তিনি। সাম্মানিক ৫০,০০০ টাকা পেয়েছিলেন সেই কলেজ থেকে। কিন্তু সেই টাকা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন তিনি।
ব্রজরাজের ব্যবহারে তার রাজবংশের পরিচয়ই পাওয়া যেত। তাদের রাজত্বে কোনও জেল ছিল, কড়া শাস্তিও চিল না। সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন তারা। জগন্নাথ মন্দিরে বারবার বহিরাগতদের আক্রমণ হওয়া সত্ত্বেও এই রাজারাই বাঁচিয়েছিলেন জগন্নাথের মূর্তি। তাই ওড়িশার ইতিহাসে তারা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ১২ বছর ধরে তারা ওই মূর্তি লুকিয়ে রেখেছিলেন। ওরে সেটি পুনরায় স্থাপন করা হয়।
১৯৪৩-এ রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন ব্রজরাজ। ১৯৪৭-এ রাজত্ব হারান তিনি। অল্প বয়সে শিকারে পারদর্শী ছিলেন ব্রজরাজ। গাড়ির শখও ছিল তার। প্রায় ৫৬ টি গাড়ি কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজত্ব চলে যাওয়ার পর মদে আসক্ত হয়ে পড়েন ব্রজরাজ। পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। ১৯৬০ থেকে তিনি তার স্ত্রী রাসমনি দেবী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন।
পরে তাকে ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট দিতে চান বিজু পট্টনায়ক। তিনি বলেন, 'একজন রাজা ভোট ভিক্ষে করতে পারবে না।' রাসমনি দেবী ভোতে দাড়ান। জিতেও যান। এরপর ব্রজরাজ তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে শুরু করেন। চার একর জমির উপর অবস্থিত প্রাসাদ বিক্রি করে দেন সরকারের কাছে। মেয়েদের স্কুল তৈরির শর্তে দিয়ে দেন সেই প্রাসাদ।-কলকাতা ২৪
৭, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ