রবিবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৬:৩৪

‘গুলিবিদ্ধ মানুষগুলো হামাগুড়ি দিচ্ছিল, আর আমি...

‘গুলিবিদ্ধ মানুষগুলো হামাগুড়ি দিচ্ছিল, আর আমি...

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাত তখন প্রায় ৮টা। বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষ বাড়ি ফিরছে। পথে একটি দোকানের সামনে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে গল্প করছে। এমন সময় ঘটে যায় ভয়ঙ্কর ঘটনাটি।

ভারতের আসামের তিনসুকিয়া জেলায় গত বৃহস্পতিবার ৫ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামকে (উলফা) এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দোকানের সামনে যখন মানুষজন গল্প করছিল তখন হঠাৎ করে তিনটি মোটরবাইক এসে দাঁড়ায় সেখানে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুজন করে লোক। তাদের পরনে ছিল সেনাবাহিনীর পোশাক।

৬ জনের মুখে বাঁধা ছিল কালো কাপড়। প্রত্যেকের হাতে রাইফেল। তখন আমি দোকানের সামনে মোবাইলে গেম খেলছিলাম। ওরা এসে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের ডাকছিল।

আসামের ওই ঘটনা থেকে ভাগ্যজুড়ে বেঁচে গিয়েছিলেন সহদেব নমশূদ্র। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি সে দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

সহদেব বলেন, যখন তারা একে একে ডাকছিল তখন এলাকা ছিল অর্ধেক অন্ধকার। আমি পরিস্থিতি বোঝার জন্য মোবাইলের টর্চলাইট জ্বালালাম। তারা আমাকেও ডেকে নিল। বলল, কিছু আলোচনা রয়েছে।

ওরা আমাদের নিয়ে ভুপেন হাজারিকা সেতুর তলার দিকে গেল। সেতুর তলায় তখন অন্ধকার। অন্ধকারে হাঁটতে সমস্যা হওয়ায় আমি আবারো মোবাইলের লাইট জ্বালাই। তখন একজন আমাকে ধমক দেয় এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।

সেতুর নিচে গিয়ে তারা আমাদের বসতে বলল। অনন্ত আর অবিনাশ দুজনই নিহত হয়েছে। বসতে চায়নি। তখন রাইফেল উঁচিয়ে সবাইকে জোট করে বসায়। বসামাত্রই গর্জে উঠে রাইফেল।

মুহূর্তে রক্তে ভিজে গেল ওই জায়গা। মৃত্যুযন্ত্রণায় অনেকে ছটফট করছিল। তার পরে আর কিছু মনে নেই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

কিন্তু হুঁশ ফিরে দেখলাম আমি বেঁচে আছি! গর্তের ভেতরে ঝোপে পড়ে গিয়েছিলাম। ওরা অন্ধকারে আমাকেও মৃত ভেবে চলে যায়।

ভয়ে আমার গলা দিয়ে তখন শব্দ বের হচ্ছে না। দেখলাম, গুলিবিদ্ধ মানুষগুলো বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টায় সামান্য হামাগুড়ি দিয়ে একে একে নিথর হয়ে গেল। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরে যখন নিশ্চিত হলাম যে হামলাকারীরা সবাই চলে গিয়েছে, তখন বেরিয়ে এসে গ্রামে যাই।

গ্রামে গিয়ে দেখলাম গ্রামবাসী কিছুই জানে না। তারা মনে করছিল বাজি ফাটছে। পরে আমি তাদের সবকিছু খুলে বলি। গ্রামের মানুষকে নিয়ে এসে দেহগুলো সরাতে গিয়ে দেখি, তখনও একজন জীবিত আছে। তাকে ঠেলায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পানি খাওয়ার পরে ঠেলার ওপরেই মারা যান তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে