রহস্যেঘেরা কামরু কেল্লা, ভেতরে ঢুকলে নাকি ফেরা দুষ্কর!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলার সাংলা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার। সেখানে পাহাড়ের কোলে রয়েছে এক রহস্যজনক কেল্লা। নাম কামরু কেল্লা।
এই কেল্লাকে ঘিরে বহু কাহিনি স্থানীয়দের মুখে মুখে শোনা যায়। যার মধ্যে সব থেকে চর্চিত, অসমের গুয়াহাটিতে থাকা কামাক্ষা মন্দিরের দেবী মূর্তি এই কেল্লায় রাখা আছে। প্রসঙ্গত, কামাক্ষা মন্দিরে দেবী মূর্তি নেই। কবে থেকে নেই, তা কেউ বলতে পারেন না। কিন্তু, কোনও এক সময়ে কামাক্ষা মন্দিরে দেবী মূর্তি ছিল বলে জানা যায় স্থানীয়দের থেকে। সেই দেবী মূর্তি হিমাচল প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর থেকেই কামরু গ্রামে এই কেল্লায় রয়েছে ওই দেবী মূর্তি।
দ্বিতীয় প্রচলিত গল্প হল, কাশী বা বারাণসী ছাড়া ভারতে একমাত্র এই কেল্লায় ৩৩ কোটি দেবতা রয়েছে। আর তৃতীয় প্রচলিত গল্প হল, এই কেল্লার পাতালঘরে এখনও ভারতীয় কায়দায় সংরক্ষিত মমি রয়েছে। আছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রায় ১০০০ বছরের বেশি পুরনো এই কেল্লা। কে বা কারা তৈরি করেছিল এই কেল্লা, তার কোনও সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। বাষ্প নদীর ধারে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই কেল্লা কাঠের তৈরি। এই কেল্লা ছিল বাসাহার বা বুসাহির রাজ পরিবারের। ১৮০৩ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত এই কেল্লা চলে যায় নেপালি রাজাদের হাতে। পঞ্জাবের রাজা রঞ্জিত সিং ১৮১৫ সালে নেপালি রাজাদের হিমাচল প্রদেশ থেকে বিতাড়িত করেন। তারপর থেকে এখানে হিন্দু রাজারা রাজত্ব করেছেন।
আজ এই কেল্লা বন্ধই পড়ে থাকে। বছরে একবার এই কেল্লা খোলা হয় দেব দেবীদের পূজার্চনা ও কেল্লা পরিষ্কার রাখার জন্য। এমনিতে কেল্লা বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন রাত আটটা নাগাত কেল্লার বাইরে থেকে পুরোহিত পুজো করেন। বংশানুক্রমে কেল্লার পুজো করে আসছেন তারা। কিন্তু, কেল্লার প্রধান ফটক তারা খোলেন না। এমনিতে এই ইমারতটিকে কেল্লা বলা হলেও লাল কেল্লা বা আগ্রা ফোর্টের মতো এই কেল্লা নয়। বরঞ্চ কাঠের বিশাল বাড়ি বলাই বাহুল্য। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের এক অদ্ভুত ভাস্কর্য দেখা যায় কেল্লায় ছাত থেকে শুরু করে ফটক পর্যন্ত। কাঠের অনবদ্ধ কাজ। যে কাজ নেপালের দরবার স্কয়্যারে দেখতে পাওয়া যায়, সেই কাজের নিদর্শন আছে এই কেল্লায়। রাস্তা থেকে মোট ৩১৩টা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় এই কেল্লায়। সময় লাগে ঘণ্টা খানেক। সকালবেলা কেল্লা চত্বরে ঢুকতে গেলে মাথায় পরতে হয় হিমাচলি টুপি, কোমরে জরির ওড়না। কেল্লার ভিতরে অবশ্য ঢুকতে দেওয়া হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই কেল্লাকে যেমন সম্মান করেন, তেমনই ভয়ও পান। তাঁদের কথায়, এই কেল্লার রহস্য উৎঘাটন করতে গিয়ে বহু দেশি বিদেশি পর্যটক ভিতরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। মাটির তলায় এই কেল্লা কত দূর বিস্তৃত কেউ জানেন না। কেউ এটাও জানেন না, কামাক্ষা দেবীর মূর্তিকে এই জায়গায় কে বা কারা কবে নিয়ে এসেছিলেন। কী ভাবেই বা এই কেল্লায় ৩৩ কোটি দেবদেবী স্থান পেলেন, আর কেল্লায় ভিতরে যে মমি আছে তা কাদের সেটাও কেউ জানেন না।
৯, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ