বুধবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৯, ১১:০৩:৪০

দুর্ঘটনায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আপন হয়ে গেছেন তারা!

দুর্ঘটনায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আপন হয়ে গেছেন তারা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সচরাচর সড়ক দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষ। অবশ্য এর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তার বদলে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা, গহনা নিয়ে টানাহেঁচড়াও করেন কিছু মানুষ।

তবে ভারতের বালুরঘাটে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ভিন্নভাবে ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। একটা তলিয়া যাওয়া বাসের জানালা গলে ভেসে ওঠা কয়েকটা মুখ দেখে হাত বাড়িয়েছিলেন অনেকেই।শীতের সকালে সেই বাঁচিয়ে তোলার নিবিড়তায় তারা কেউ হয়েছেন বোন, কেউ বা কারো ভাতিজা।

অথচ, এক বছর আগেও সেই কুয়াশা-নিবিড় ভোরের আগে তারা কেউ কাউকে চিনতেন না। আর এখন, একজন আরেকজনের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন, একজনের বাড়ি থেকে আসছে পূজার শাড়ি। বালুরঘাটে সেই দুর্ঘটনাই তাদের মধ্যে যেন রক্তের সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছে।

বালুরঘাট সেতুর পাশেই ভাণ্ডারদহের পাড়ে সুদীপ্ত মণ্ডলের বাড়ি। তার ছোট্ট খাবার দোকানটাও বিলের কোল ঘেঁষেই। ঘটনার দিন, ডুবন্ত যাত্রীদের আর্ত চিৎকারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেছিলেন বিলের গহীর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে কয়েকজন।

সুদীপ্ত বলছেন, দেরি না করে  না করে আমার পড়শি প্রীতম পালকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা ভাসাই বিলে। একে একে টেনে তুলেছিলাম তিন জনকে।

তাদের মধ্যেই ছিলেন মৌমিতা মণ্ডল। সুদীপ্তর বাড়িতেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছিল। বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন সুদীপ্তই।

ডোমকলের জয়রামপুরের মৌমিতা সেদিন মালদহে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। বলছেন, আমার এক ভাই আছে। কোনো ভাই ছিল না। বালুরঘাটের ঘটনা অন্তত একটা ভাই দিল, যে বোনের প্রাণ বাঁচায়!

সলজ্জ সুদীপ্ত বলছেন, আমার কোনো বোন ছিল না। বালুরঘাটের পানি থেকে অন্তত একটা বোন পেলাম!

বালুরঘাট কুমারপাড়ার সুকুমার হালদার সেদিন বিল থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই তালিকায়  ছিলেন ডোমকলের এক নারী। সেই প্রাণ-বাঁচানো ভোরের পর দু’বাড়ির ঘোর আলাপ এখন। এ বাড়ি থেকে রুপোলি পার্শে পাড়ি দেয় তো ও বাড়ি থেকে পূজার পোশাক। করিমপুরের সুন্দলপুরের সাধন মণ্ডলের সঙ্গেও এখন চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক সুকুমারের।

সুকুমার বলছেন, কালীপূজায় সুন্দলপুরে সাধনের  বাড়ি গিয়ে ক’দিন কাটিয়েও এলাম। সাধনও এ বাড়িতে এসে বলে, ‘কী কাকা, মুড়ি মাখ!’ সাধন বলছেন, সাঁতার জানি না। বিলে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। বাঁচব ভাবিনি। উনি হাতটা না বাড়ালে....নাহ, ভাবতে পারছি না।

কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করেন সাধন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে