মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ১২:৩২:১৬

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা : যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ!

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা : যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ!

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা : যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ! কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে আধা সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে হামলার রেশ না কাটতেই গতকাল সোমবার স্বাধীনতাকামীদের সাথে গোলাগুলিতে মেজরসহ চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। পিংলান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি চালায় সন্দেহভাজন যোদ্ধারা। নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে মারা যায় দুই স্বাধীনতাকামী ও তাদের আশ্রয়দাতা। 

এ দিকে সহিংসতার এসব ঘটনার মধ্যে আবার উত্তেজনা বেড়েছে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে। ইসলামাবাদকে হামলার নেপথ্যের ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করছে নয়াদিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল হুমকি দিয়েছেন, পাকিস্তানের সাথে আলোচনার সময় শেষ। এখন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময়। সময় মতো সুবিধাজনক উপায়ে প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে পাকিস্তানও। অন্য দিকে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সতর্কতা না নেয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ ভারতের বিরোধী দলের নেতারা। একই সাথে ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশ। টাইমস অব ইন্ডিয়া,এনডিটিভি ও রয়টার্স। 

গত বৃহস্পতিবার পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে বহরের একটি বাস সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়। প্রাণ হারায় বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য। হামলার পর জয়েশ-ই-মোহাম্মদ নামে উগ্রবাদী একটি সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, আদিল আহমেদ দার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ওই হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন কাশ্মির পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত রয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ল।

খবরে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাকামীদের উপস্থিতির সংবাদ পেয়ে সোমবার ভোরে পুলওয়ামার পিংলান এলাকা ঘিরে ফেলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। এ সময় চার ভারতীয় সৈন্য নিহত ও দুইজন আহত হয়। এ ছাড়া দুইজন স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা প্রাণ হারায়। নিহত সেনাদের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর মেজর। স্বাধীনতাকামীরা যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে বাড়ির মালিক নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা গেছে। পুলওয়ামায় সম্প্রতি আত্মঘাতী হামলা চালানো আদিল দারের সাথে এ হামলাকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গতকালের ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী হামলার স্থান থেকে ছয় থেকে আট কিলোমিটার দূরে ঘটেছে বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের।
আদিলের বাবা গুলাম হোসেনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু-পরবর্তী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পাথর ছোড়ার অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল তার ছেলে। তারপরই সেনাবাহিনীর প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায় তার। ছেলের মৃত্যু ও কাশ্মিরের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করেছেন আদিলের বাবা। 

কুলভুশন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে দুই দেশ : পাকিস্তানে আটক ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কুলভুশন সুুধির যাদবের ফাঁসির আদেশ দেয়ার বিষয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। রয়টার্স জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তাকে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের সামরিক আদালত। কিন্তু সে সময় ভারতের আবেদনের ভিত্তিতে আইসিজে রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়। গতকাল থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া। রায় হতে পারে আগামী জুন মাসে।

কুলভুশনকে (৪৮) আটক করা হয়েছিল বেলুচিস্তান থেকে। পাকিস্তানের ওই অংশে স্বাধীনতাকামীরা সক্রিয়। পাকিস্তানের সামরিক আদালত ২০১৭ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে আইসিজের পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ আনতে সমর্থ হয় ভারত। এরপর ভারত তাকে কূটনৈতিক সহায়তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান তার সাথে ভারতীয় কর্মকর্তাদের যোগাযোগের সুযোগ দেয়ার আবেদন নাকচ করে। তবে পাকিস্তান ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যাদবকে তার মা ও স্ত্রীর সাথে ইসলামাবাদে দেখা করার সুযোগ দিয়েছিল।

আইসিজের শুনানির প্রথম দিনে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করার কথা ভারতের। পাকিস্তান তার পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করবে পরদিন। এরপর ভারত আবার পাকিস্তানের বক্তব্যের জবাব দিতে পারবে। পাকিস্তান ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্তভাবে উপস্থাপন করবে তার বক্তব্য। আন্তর্জাতিক আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দিতে পারে জুন মাসে। এখানকার আদালতের রায়ই চূড়ান্ত, এর বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যাবে না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে