বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ১২:১২:০৪

এবার সুর নরম করে পাকিস্তানকে আলোচনার বার্তা দিল মোদী

এবার সুর নরম করে পাকিস্তানকে আলোচনার বার্তা দিল মোদী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিআরপি কনভয়ে গত ১৪ তারিখের জঙ্গি হানার পরেই পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আলোচনার পাট শেষ।’’ আজ কিন্তু সুর কিছুটা নরম করে ইসলামাবাদকে ফের আলোচনার বার্তাই দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হল, ‘‘সামগ্রিক আলোচনা যেখানে শুরু হতে পারে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সে রকম পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ।’’ 

পুলওয়ামার হামলার পরে জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মৌলানা মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় আনার দাবি জোরদার হয়ে ওঠার আবহে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন সলমন। সেখানে পাকিস্তান-সৌদি যৌথ ঘোষণাপত্রে ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ। আজ সেই ঘোষণাপত্রের উল্টো পথে হেঁটেছেন সলমন। সৌদি-ভারত বিবৃতি বলছে, ‘‘জঙ্গির পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকেও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় আনার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।’’ সীমান্তপারের সন্ত্রাস রোখা, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা— সবই রয়েছে বিবৃতিতে। 

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকের পরে এ কথা স্পষ্ট যে, পুলওয়ামা-পরবর্তী পরিস্থতি সামলাতে কূটনৈতিক পথেই জোর দিচ্ছে দিল্লি। সৌদি আরব পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই সে দেশের নেতৃত্বকে পাশে রেখে বার্তা দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদকে। বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের মে থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে মোদী যে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তার প্রশংসা করেছেন সলমন। কিন্তু ঘটনা হল, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তৃতীয় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না— এটাই ছিল এত দিন সাউথ ব্লকের অবস্থান। সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তান প্রসঙ্গ রেখে সেই অবস্থান থেকে সরে এল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। 

আজ পাকিস্তানের নাম করেননি সলমন। কিন্তু সূত্রের খবর, বৈঠকে পুলওয়ামার হামলা এবং পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের স্বর্গোদ্যান গড়ে ওঠা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য ও প্রমাণ তাঁর সামনে হাজির করেছে দিল্লি। সৌদি যুবরাজের কথায়, ‘‘আমাদের দু’দেশের একটি সাধারণ উদ্বেগ হল সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদ। ভারত এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ থাকে। এ ব্যাপারে ভারতের ভূমিকাকে আমরা সমর্থন করি।’’ তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করা এবং জঙ্গি সংগঠনগুলির অর্থের জোগান বন্ধ করতে দু’দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় হবে। খুব শীঘ্রই শুরু হবে যৌথ নৌ-মহড়াও।

পাকিস্তানের নাম না-করে মোদীও বলেন, ‘‘যে সব দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে, তাদের উপরে চাপ তৈরি করা হবে। যুবশক্তি যাতে বন্দুক হাতে না-তোলে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ যৌথ বিবৃতি আরও বলছে, ভারত এবং সৌদি আরব সন্ত্রাসকে কোনও বিশেষ জাতি বা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করার বিরোধী। 

আগামিকাল সকালেই একটি শান্তি পুরস্কার নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোল রওনা হচ্ছেন মোদী। তার আগে পাকিস্তানকে ঘুরপথে আলোচনার বার্তা দেওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ মনে হচ্ছে কূটনীতিকদের। গত কয়েক দিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তাপ না-বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছিল আমেরিকা। আফগানিস্তান ছেড়ে বেরোনোর সময়ে ভারত-পাক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি যথেষ্ট অসুবিধাজনক ওয়াশিংটনের পক্ষে। আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাক সমস্যা মেটানোর কথা বলেছেন। 

সফররত সৌদি বিদেশমন্ত্রী অবশ্য কোনও রাখঢাক করেননি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যদি জইশ-ই-মহম্মদ এবং মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অকাট্য প্রমাণ থাকে, তা হলে অবশ্যই রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় তাদের নিয়ে আসা প্রয়োজন।-আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে