সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯, ১১:২২:৩১

‘হাজী মহসিন’ উপাধি পেতেই পারেন, এক ঘোষণাতেই দান করলেন ৫৩ হাজার কোটি!

 ‘হাজী মহসিন’ উপাধি পেতেই পারেন, এক ঘোষণাতেই দান করলেন ৫৩ হাজার কোটি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক দানের জন্য তিনি ভারতের ‘হাজী মহসিন’ উপাধি পেতেই পারেন। কিন্তু এবার মুকেশ আম্বানিসহ সব ধনীকে ছাড়িয়ে দানের খাতায় বিশ্ব তালিকায় উঠে এলেন তিনি। ভারতের চতুর্থ বৃহৎ সফটওয়্যার সেবা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান উইপ্রোর চেয়ারম্যান আজিম হাশিম প্রেমজি।

গত বুধবার আজিম প্রেমজি এক ঘোষণাতেই প্রায় ৫৩ হাজার কোটি রুপি দান করে দিলেন। দেশের শিক্ষার বিস্তারে অনেক দিন ধরেই কাজ করে চলেছে আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন। তিনি ঘোষণা দিলেন উইপ্রোতে তাঁর ৩৪ শতাংশ শেয়ারের সবটাই আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনে চলে যাবে। যার মূল্য দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৭৫০ কোটি রুপি (৭৫০ কোটি ডলার)। এর ফলে আগের ঘোষণাসহ উইপ্রোতে প্রাপ্ত তাঁর পরিবারের ৬৭ শতাংশ শেয়ারের আয় চলে যাবে ফাউন্ডেশনে। কম্পানিটিতে তাঁর পরিবারের শেয়ার রয়েছে ৭৪.৩০ শতাংশ। এতে আজিম প্রেমজির দান বেড়ে দাঁড়াল ২১০০ কোটি ডলার। তিনি এখন দানের দিক থেকে ভারতের সব ধনীকে ছাড়িয়ে বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটদের তালিকায় উঠে এসেছেন।

এ ঘোষণায় আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের অর্থ বেড়ে দাঁড়াল এক লাখ ৪৬ হাজার ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ রুপি। বহু দিন ধরেই এ প্রতিষ্ঠান অর্থ সাহায্য করে চলেছে অন্তত ১৫০টি অলাভজনক সংস্থাকে। যারা শিক্ষার জন্য সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষকে কয়েক বছর ধরে আর্থিক অনুদান দিয়ে চলেছে।

আজিম প্রেমজির বাবা মোহাম্মদ হাশেম প্রেমজি ছিলেন ভারতের একজন বড় ব্যবসায়ী। যিনি গড়ে তুলেছিলেন ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া প্রডাক্টস লিমিটেড। ১৯৬৬ সালে বাবার মৃত্যুতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলে স্নাতক শেষ না করেই ফিরে আসেন দেশে। মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেন আজিম হাশিম প্রেমজি। কম্পানিটি তখন ভোজ্য তেল উৎপাদন করত। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনো পরিবর্তনের হাওয়া ভারতে লাগেনি। আজিম প্রেমজি অনুভব করলেন ভারতকে এগিয়ে নিতে হলে তথ্য-প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করতে হবে। ফলে দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই নিলেন। ১৯৮০ সালে কম্পানির নাম বদলে করলেন উইপ্রো। যাত্রা শুরু হলো তথ্য-প্রযুক্তি খাতে।

মাত্র চার দশকের ব্যবধানে তিনি উইপ্রোকে যেমন বৈশ্বিক প্লেয়ারে পরিণত করলেন, তেমনি ভারতকেও নিয়ে এলেন নতুন উচ্চতায়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত একটানা ভারতের সর্বোচ্চ আয় করা প্রতিষ্ঠান উইপ্রো। বাবার ২০ কোটি ডলারের ব্যবসা তাঁর হাত দিয়ে বর্তমানে শতকোটি ডলারে পরিণত হয়েছে।

২০১০ সালে তিনি আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ভারতের ২৪টি রাজ্যের ছেলে-মেয়েরা এখানে এসে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আজিম প্রেমজি প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় তিনি প্রতিনিয়ত দান করে যাচ্ছেন।

এই মানুষটি বিশ্বাস করেন একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই ভারতের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের সামাজিক সমস্যা একবারে দূর হবে, যদি অর্থ সাহায্য শিক্ষায় রূপান্তর করা যায়। পাঁচজন মানুষের দারিদ্র্য দূর করার অর্থে পাঁচজন দরিদ্রকে শিক্ষার সুযোগ করে দিলে ভবিষ্যতে পাঁচশত মানুষকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করা সম্ভব।’

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাফল্য দুবার অর্জিত হয়, প্রথমে মনে তারপর বাস্তবে। তিনি বলেন, সাফল্য ও অভাবনীয় সাফল্যের মূলেই হচ্ছে মানুষ। ১৯৪৫ সালে ভারতের মুম্বাইতে একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আজিম প্রেমজি। ইকোনমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, উইকিপিডিয়া।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে