শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯, ১১:২১:০০

প্রশংসায় ভাসছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

প্রশংসায় ভাসছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

মুফতি তাজুল ইসলাম: ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের দরদি চেহারা বিশ্ব দেখেছে। একদিকে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘাতকতে গ্রেপ্তার করেছেন। অন্যদিকে হতাহতের ঘটনায় শোকার্ত মুসলিমদের তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারব না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, একসঙ্গে আমরা অনেকটা পথ হাঁটব।’

শুরু থেকেই পোশাকেও জেসিন্ডা থেকেছেন নির্মোহ। নিজেদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে মুসলিম কমিউনিটিতে হাজির হয়েছেন হিজাব পরিধান করে। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) জেসিন্ডা যেন হৃদয়ের জানালা খুলে দিয়েছেন। গত ১৫ মার্চের নৃশংসতার স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জেসিন্ডা তাঁর বক্তব্য শুরু করেন আরবিতে ‘আসসালামু আলাইকুম (অর্থ : আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে।

শুধু তা-ই নয়, এদিন নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মের অনুসারীদের সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা নিজ ধর্মের বেশে সংসদে প্রবেশ করেন।

পরে প্রথমে মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাজের ব্যবস্থা করে দেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। এরপর বাকি ধর্মের অনুসারীরাও প্রার্থনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সঙ্গে গত ১৫ মার্চ মসজিদে হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেন। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের এক সপ্তাহ পূরণ হবে আজ শুক্রবার (২২ মার্চ)। সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশ হিসেবে আজ দেশটির সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে জুমার নামাজের আজান সরাসরি সম্প্রচারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। গত বুধবার (১৮ মার্চ) ক্রাইস্টচার্চের একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এমন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দেশটির ইংরেজি দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড বলছে, স্বাভাবিকভাবে যেকোনো প্রাণঘাতী নৃশংসতার পর এক মিনিটের নীরবতা পালনের রেওয়াজ থাকলেও ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভয়াবহতার কারণে এবার দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।

নৃশংস এ হামলার প্রতিবাদে দেশটির সব ধর্মের মানুষ হিজাব পরে মুসলিমদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করবে।

‘সম্প্রীতির জন্য হিজাব’ নামে এই কর্মসূচি আজ (২২ মার্চ) পালন করা হবে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের মানুষ এই ঘটনায় শোকাহত। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া ৫০ জন মা, বাবা, সন্তান, সহকর্মী ও বন্ধুদের প্রতি আমরা ভালোবাসা ও সহমর্মিতা জানাতে চাই। মুসলিম কমিউনিটি যে অসহনীয় অবস্থার শিকার হয়েছে, এ কঠিন দুঃসময়ে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

এদিকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার পরপরই দেশটির বিদ্যমান অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে যে কেউ অস্ত্র কিনতে পারে। বয়স ১৬ বছর হলেই এ লাইসেন্স দেওয়া হয়। একবার লাইসেন্স হাতে পেলে একজন ব্যক্তি একাধিক অস্ত্র কিনতে পারে। এ নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা আছে। তবে আশার কথা হলো, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্ত্র আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরই এ আইন সংস্কারের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। সব কিছু মিলিয়ে হামলা-পরবর্তী নিউজিল্যান্ডের সরকার, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা গোটা বিশ্বের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে।

লেখক : ইসলামী গবেষক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে