শুক্রবার, ০৭ জুন, ২০১৯, ১০:৩৪:০০

ধর্ম আলাদা, তবুও ২৫ বছরের বন্ধুত্ব অটুট যে কারণে

ধর্ম আলাদা, তবুও ২৫ বছরের বন্ধুত্ব অটুট যে কারণে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যেক দিন বিকেল হতেই পোশাক বদলে দরজার দিকে চোখ রাখেন ৬২ বছরের দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ চমন লাল। বন্ধু মোহম্মাদ আনওয়ার মীরের অপেক্ষায়। দীর্ঘ ২৫ বছরে এক দিনের জন্যও এই কাশ্মিরী পণ্ডিত চমন লালের অপেক্ষা ব্যর্থ হতে দেননি তার এই মুসলিম বন্ধু।

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, চমন লালের বাড়ি দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানের জ়ায়নাপোরায়। বছর সত্তরের মীর থাকেন সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বাবাপোরায়। রোজ ওই পথ পেরিয়ে দৃষ্টিহীন চমন লালকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে বের হন মীর। রাস্তায় মানুষের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা, গল্পগুজবে মেতে ওঠেন। এভাবে পেরিয়ে যায় ঘণ্টা দুয়েক। সফর শেষে বন্ধুকে ফের বাড়ি পৌঁছে নিজের বাড়ির পথ ধরেন মীর।

পঁচিশ বছর আগে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারান চমন লাল। তার ভাইয়েরা কাজের খোঁজে একে একে ঘর ছাড়ার পর জ়ায়ানপোরার বাড়িতে একাই থেকে যান ওই বৃদ্ধ। দৃষ্টিশক্তি নেই, ফলে চার দেওয়ালের বাইরে পা রাখার ক্ষমতাও হারিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে ভরসা হয়ে পাশে এসে দাঁড়ান তার ছোটবেলার বন্ধু মীর।

চমন লাল বলেন, ‘মীরের কাঁধে হাত রাখতেই আমার মধ্যে সিংহের আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে!’ মীর কখন আসবেন বোঝেন কী করে- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেখতে পাই না ঠিকই। কিন্তু ওর আসার সময় হলে ঠিক বুঝতে পারি। ওর ঘরে ঢোকার আওয়াজ পেতেই মনটা ভালো হয়ে যায়।’

স্থানীয়দের কাছে ‘দুনিয়ার অষ্টম আশ্চর্য’নামেই পরিচিত আনওয়ার মীর ও চমন লালের বন্ধুত্ব। আনন্দবাজার বলছে, জ়ায়ানপোরায় যে এলাকায় লালের ছোট এক তলা বাড়ি সেখানে হিন্দুরা এখন সংখ্যালঘু। চমন লাল ছাড়া বাস পাঁচটি পণ্ডিত পরিবারের। তবে সকলেই মিলেমিশে থাকেন। ধর্মের ভিন্নতা সেখানে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ঠিক যেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি মীর ও চমন লালের এই সৌহার্দ্যের সম্পর্কেও।

শুধু শুক্রবার নামাজ পড়তে অনেকটা সময় কেটে যায় বলে বন্ধুর কাছে আসতে পারেন না মীর। তা ছাড়া ঝড়-বৃষ্টি বা অসুস্থতা, এত বছর কোনো কিছুই চমন লালের বাড়ি আসা থেকে আটকাতে পারেনি মীরকে।

প্রতিবেশী মোহাম্মাদ ইসমাইল মালিকের কথায়, ‘মীরকে বার বার বলি, আবহাওয়া বা শরীর খারাপ থাকলে বেরোতে হবে না। কিন্তু তিনি শুনলে তো! তার মুখে ওই এক কথা, চমন লাল অপেক্ষা করে রয়েছে। ওকে নিয়ে হাঁটতে যেতে হবে...’

শুধু হাঁটতেই নয়, বিয়েবাড়ি, হাসপাতাল বা অন্য যেকোনো জায়গায় যেতে হলে চমন লালই মীরের একমাত্র ভরসা। এই বয়সেও বন্ধুর জন্য এতটা করার শক্তি পান কোথা থেকে?

জবাব দিতে গিয়ে মীরের পাল্টা প্রশ্ন, ‘হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আমার আদর্শ। তিনি যখন সকলের জন্য এতটা ভাবতেন, করতে পারতেন তবে আমি কেন চেষ্টা করব না?’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে