সোমবার, ০৫ আগস্ট, ২০১৯, ০৪:৩৬:০৪

কাশ্মিরীদের আশঙ্কাই সত্যি হলো, কেড়ে নেওয়া হলো কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার

কাশ্মিরীদের আশঙ্কাই সত্যি হলো, কেড়ে নেওয়া হলো কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বড় ঘোষণা মোদি সরকারের। কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে ভারত সরকার। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব দিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

তবে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাদাখে কোনও বিধানসভা থাকবে না, এমন প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতীয় সংবিধানের যে অনুচ্ছেদের ফলে জম্মু ও কাশ্মির বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা পেয়ে আসছিল, তা বাতিল করে কেন্দ্রের শাসনের আওতায় আনতে পার্লামেন্টে বিল তুলেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

বিপুল পরিমাণে সেনা মোতায়েন জম্মু-কাশ্মীরে। এর মধ্যেই রবিবার গভীর রাত থেকে শ্রীনগরে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। যার জেরে নতুন করে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সঙ্কট তৈরি হল। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন তিন মুখ্যমন্ত্রী তথা শীর্ষ নেতা ওমর আবদুল্লাহ, ফারুখ আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংসদে বিক্ষোভ দেখালেন পিডিপির দুই সাংসদ নাজির আহমেদ ও এমএম ফায়েজ। ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব পেশের পরই প্রতিবাদে সরব হন তাঁরা। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ধিক্কার জানিয়েছে কংগ্রেস। ‘ঐতিহাসিক ভুল শোধরাচ্ছে মোদী সরকার’, এ ভাষাতেই টুইট করলেন বিজেপির রাজ্যবর্ধন রাঠৌর। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘‘এটা সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত, ঐতিহাসিক’’।

অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে মুখ খুললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। টুইটারে মেহবুবা লিখেছেন, ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য আজ কালো দিন।’ পাশাপাশি পিডিপি নেত্রী লিখেছেন, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

কাশ্মিরে যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। গত শনিবার হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে তীর্থযাত্রীদের এবং সেই সাথে কাশ্মির ভ্রমণরত পর্যটকদের দ্রুত এলাকাটি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ভারত সরকার। শুরু হয় ঘরে ঘরে তল্লাশি।

মানুষ আতঙ্কিত হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক দিন আগে কাশ্মিরে ১০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে ভারত। আরো ২৮ হাজার পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই কাশ্মিরে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তা সবাই ধরেই নিয়েছিল।

যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গোয়েন্দা সূত্রে সম্ভাব্য হামলার কথা জানতে পেরেছে। তাই এত নিরাপত্তা। কিন্তু অনেকেই বলছেন সংবিধানে কাশ্মিরে বিশেষ অধিকার সম্বলিত ৩৫-ক এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের চেষ্টা করছে সরকার। কাশ্মিরের গভর্নর এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে চুপ ছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছিলেন, সেনা মোতায়েনের পেছনে সরকারের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। সোমবার সেইসব শঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। রোববার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মির পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য সে কথা স্বীকার করেনি ভারত সরকার।

তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিতর্কিত এই উপত্যকাটির বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় থানা পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট। 

অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ রয়েছে। পুরো উপত্যকা জুড়েই বিরাজ করছে এক ভীতিকর পরিবেশ। শনিবার এই বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা চরমে উঠলে রোববার কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বাড়িতে এক সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হন। 

কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তাই তাদেরকে ওইদিন রাতেই গৃহবন্দী কিংবা আটক করা হয়। এরপর সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে গৃহীত হয় কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার বিল।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে