আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ ও রাজ্যকে দু’টি প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপের মুখে পড়ল ভারত। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কার করে কার্যত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পাকিস্তান।
পাশাপাশি কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। পাশাপাশি মার্কিন বিদেশ দফতরও জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের কথা তাদের আদৌ জানায়নি নরেন্দ্র মোদি সরকার। লাদাখ আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় ক্ষুব্ধ চীনও। তবে চীনের ক্ষোভকে আমল দিতে রাজি নয় দিল্লি।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পর থেকেই ভারতকে ক্রমাগত হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে পাকিস্তান। পাক পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে মন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরি বলেন, ‘যখন কূটনীতিই হচ্ছে না তখন কূটনীতির জন্য অর্থ খরচ করে লাভ কি? ভারতীয় হাইকমিশনার এখানে কী করছেন? পাক হাইকমিশনারও বা দিল্লিতে কী করছেন? ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।’
সুর আরও চড়িয়ে ফওয়াদ বলেন, ‘যুদ্ধকে পাকিস্তান ভয় পায় না। অসম্মান ও যুদ্ধের মধ্যে বাছতে হলে যুদ্ধকেই বেছে নেওয়া উচিত।’ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে যেতে পারে বলে জানান ফওয়াদ। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারাও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি করেন।
পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতীয় হাইকমিশনারকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই দিল্লিতে নয়া পাক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল মইন উল হকের। পাক সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁকেও আর ভারতে পাঠানো হবে না। পাশাপাশি ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব উড়ানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা আংশিক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ।
পুলওয়ামা হামলার পরে পাক পণ্যের উপরে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসায় দিল্লি। ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বড় ধাক্কা খেয়েছিল। ভারত সরকার সূত্রে খবর, এখন বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হবে। ভারতীয় ব্যবসায়ী সংগঠন জানিয়েছে, এতে ক্ষতি বেশি হবে পাকিস্তানেরই। কারণ, তারা ভারতীয় পণ্যের উপরে বেশি নির্ভরশীল।
অন্য দিকে, লাদাখ নিয়ে বেজিং ও দিল্লির মতবিরোধ রয়েছে। ফলে ভারতের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ চিনও। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত-পাক বিবাদে তারা পক্ষ নেবে না। কিন্তু চিনের স্বার্থে ঘা লাগলে তা সহ্য করার প্রশ্ন নেই। ভারতীয় বিদেশ দপ্তর পাল্টা বলেছে, ‘ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। আমরা আশা করি, অন্য দেশও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করবে না।’
কূটনীতিকদের একাংশের মতে, সামনেই জাতিসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশন। তাতে সরব হওয়ার মতো বিষয় হাতে পেয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরানোয় সাহায্যের বদলে কাশ্মীর প্রসঙ্গে সমর্থন পেতে পারে তারা। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে ইমরানকে পাশে বসিয়ে কাশ্মীরে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে চাপে পড়তে পারে ভারত।