রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:০০:০৮

আমি খেটে মরবো আর আপনারা ধান্দাবাজি করবেন?

আমি খেটে মরবো আর আপনারা ধান্দাবাজি করবেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 'আমি খেটে মরবো, আপনারা তোলাবাজি, ধান্দাবাজি করবেন? তা চলবে না৷ কিছু নেতা-মন্ত্রীসহ সাত-আটজনকে এভাবেই ধুয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দলকেই বললেন ভালো মানুষের খোঁজ করতে৷ দরকার হলে অন্য দল থেকে ভালো মানুষ এলেও আপত্তি নেই মমতার৷ শনিবার পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাটের বাড়িতে মমতা ছিলেন রুদ্রমূর্তিতে৷ তাঁর সামনে ছিলেন নদিয়ার প্রায় শ'দুয়েক তৃণমূল নেতা৷ গত সন্তাহে কালীঘাটের বাড়িতে হুগলির নেতারা পড়েছিলেন নেত্রীর ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে৷ এ দিন তোলাবাজি, দলাদলি, অসত্ সঙ্গের জন্য তাঁর কোপে পড়ল নদিয়া তৃণমূল৷ তোপের মুখে যাঁরা পড়লেন, তাঁরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান৷ অনেকের আবার লালবাতি আর ভেঁপু বাজানোর নেশা পেয়ে বসেছে৷ কিন্ত্ত হরিশ চট্টপাধ্যায় স্ট্রিটের উঠোন থেকে বেরনোর সময় মুখ কাঁচুমাচু সেই নেতা-মন্ত্রীদের৷ সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখেই লজ্জা ঢাকতে কেউ বাইরে বেরিয়ে দাবি করলেন, 'দিদি আমাকে কিছু বলেননি৷' কারও মুখে অন্য জেলার সঙ্গে তুলনা, 'বর্ধমানের থেকে ডোজ কম হয়েছে আমাদের৷' এক কথায়, দলে যে তোলাবাজি, ধান্দাবাজি, গোষ্ঠী-কোন্দল ইত্যাদি চলছে, তা মেনে নিয়েই খোলাখুলি আক্রমণাত্মক হয়েছেন নেত্রী৷ এ দিন নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে বৈঠকে চরম অপ্রস্ত্তত হতে হয়েছে৷ সূত্রের খবর, ছেলের অয়ন দত্তের জন্য মুখ পুড়েছে বাবার৷ নদিয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অয়ন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ এসেছে, অয়নের টিম কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রিপল আইটিতে তোলাবাজি করছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই তার দায় বর্তেছে বাপ-বেটার ঘাড়ে৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, 'এখনই এসব বন্ধ করো৷' অনেকে বলছেন অয়ন উপলক্ষ মাত্র৷ আসলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বার্তাটি দিয়েছেন গৌরীবাবুকেই৷ অগোছালো সংগঠন এবং দলবাজি থামাতে ব্যর্থতা নিয়েও জেলা সভাপতিকে কথা শুনতে হয়েছে নেত্রীর কাছে৷ তেহট্টের তৃণমূল নেতা তাপস সাহার সঙ্গে গৌরীবাবুর বিবাদ অনেক দিনের৷ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তেহট্ট মহকুমার ফলাফলে তার ছাপও পড়েছিল৷ তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে গৌরীবাবুর পরাজয় সুনিশ্চিত করেছিলেন তাপসবাবু৷ আসনটি জিতেছিল সিপিএম৷ তাপস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে গৌরীবাবুকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে দিয়েছিলেন৷ মহকুমার অন্য দুই বিধানসভা পলাশিপাড়া এবং করিমপুরেও জিতেছিল সিপিএম৷ বিবদমান এই দুই নেতাকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, 'এ বার ওই সিটগুলো পাব তো? আমার কিন্ত্ত নদিয়ায় সতেরোতে সতেরোটাই চাই৷' সূত্রের খবর, প্রবল চাপের মুখে গৌরীবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, তাঁকে ১৭ দিন সময় দেওয়া হোক৷ এর মধ্যেই তিনি জেলার অগোছালো সংগঠন গুছিয়ে নিতে পারবেন৷ তোলাবাজি প্রসঙ্গেই আরও তেতো কথা হজম করতে হয়েছে কল্যাণীর বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে৷ সূত্রের দাবি, তাঁকেও নেত্রী মুখের উপর বলেছেন, 'তুমি তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দিচ্ছ৷' বছরখানেক আগে নদিয়া জেলার কর্মী সম্মেলনের সময় দলের এক শীর্ষ নেতা রমেন বিশ্বাসের কেন্দ্র সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এখন ভোট হলে কল্যাণীতে আমরা আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকব৷' এ বার সেই কেন্দ্রেরই বিধায়ক খোদ দলনেত্রীর কাছে তোলাবাজিতে মদত দেওয়ার অভিযোগে মুখঝামটা খেলেন৷জেলার প্রভাবশালী নেতা এবং মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সম্পর্কে দলনেত্রীর কাছে রিপোর্ট, তিনি দলেরই এক কাউন্সিলর (নেত্রীর ভাষায় যিনি ক্রিমিন্যাল) শিশির কর্মকারের সঙ্গে একটু বেশিই দহরম মহরম করছেন৷ কিন্ত্ত উজ্জ্বলবাবুর এই ছায়াসঙ্গীকে রাজনীতিক হিসেবে নয়, বড় মাপের প্রোমোটার হিসেবেই লোকে এলাকায় বেশি চেনে৷ মন্ত্রী-প্রোমোটার সংযোগে দাঁড়ি টানতে জবরদস্ত ঘা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি উজ্জ্বলবাবুকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, 'ক্রিমিন্যালদের নিয়ে ঘোরা বন্ধ করুন৷' তবে শুধু এই কারণে নয়, লবিবাজির জন্যও মুখঝামটা খেতে হয়েছে উজ্জ্বলবাবুকে৷ দন্তরের কাজেও আর একটু বেশি মন দিতে বলা হয়েছে তাঁকে৷ ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে নদিয়া জেলায় তৃণমূলকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল সিপিএম৷ তারপর এই জেলায় কংগ্রেস থেকে লোক ভাঙিয়ে দলের আকার আয়তন অনেক বাড়িয়েছে তৃণমূল৷ কুপার্স ক্যাম্পের মতো জায়গায় কংগ্রেসকে একেবারে দুরমুশ করে ছেড়েছে শাসকদল৷ কিন্ত্ত প্রতিপক্ষ যত কমেছে, এই জেলায় দলের নেতাদের মধ্যে খেয়োখেয়িও তত বেড়েছে৷ বিধানসভা ভোটের আগে তাই দলনেত্রী একেবারে নাম ধরে বলে দিয়েছেন কোন কোন বিধানসভায় সংগঠনের হাল খারাপ৷ তিনি সাবধান করেছেন নীলিমা নাগ, সমীর পোদ্দার, আবীর বিশ্বাসের মতো বিধায়কদের৷ বৈঠকে কুকথার জন্য বিখ্যাত সাংসদ তাপস পালকে নেত্রী পাত্তাই দেননি৷ তাপস আগাগোড়া গোমড়া মুখে বসেছিলেন৷ কংগ্রেস ছেড়ে আসা শান্তিপুরের অজয় দে-র উপর মমতা বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়েছেন৷ তাঁকে জেলার সমস্ত পুরসভার মধ্যে সমন্বয় রাখতে বলা হয়েছে৷ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে