বাবা রামদেব যেভাবে ভারতের ইয়োগা গুরু থেকে কোম্পানি বস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাবা রামদেব ভারতের একজন বিখ্যাত ইয়োগা গুরু। তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তের বাইরেও। টেলিভিশনে তার শরীর চর্চ্চার অনুষ্ঠানটি এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। তবে এই ইয়োগা গুরু এখন নানা ধরনের পণ্যও বিক্রি করছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে শ্যাম্পু থেকে সিরিয়াল, সাবান থেকে ইনস্ট্যান্ট নুডলস। এজন্যে তিনি পাতাঞ্জলি নামে একটি কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
কোম্পানিটি বলছে তারা গত বছর ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য বিক্রি করেছে। এই হিসেবে এটি ভারতের অন্যতম লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিণত হতে চলেছে।
জাফরান রঙের জামা পরা, লম্বা চুল গিট দিয়ে বাঁধা, লম্বা দাড়ি, কাঠের খড়ম এবং তার কাঁধ থেকে ঝুলছে কাপড়ের ঝোলা – বাবা রামদেবকে দেখলে খুব সাধারণ একজন ইয়োগা গুরু বলেই মনে হবে।
সমবেত লোকজনের সামনে তিনি শারীরিক কসরত দেখানোর অনুষ্ঠানটি করে আসছেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তাদেরকে তিনি দেখাচ্ছেন কিভাবে নিশ্বাস নিতে হয়, এবং ছাড়তে হয় কিভাবে।
সেই বাবা রামদেব এখন তার ব্যবসা চালানোর জন্যে হরিদ্বারে কারখানাও গড়ে তুলেছেন। বাণিজ্যের আধুনিক কলাকৌশলও তার জানা আছে। সশস্ত্র একদল রক্ষী তাকে পাহারা দেয়। আছে পুলিশও, শাদা পোশাকে।
কারখানায় তার কর্মীরা তাকে দেখলেই ছুটে এসে তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে শুরু করেন। বাবা রামদেব বলেন, “ ভারতে সাধারণত বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো খাবার দাবার, প্রসাধনী আর ওষুধের ব্যবসা করে থাকে। তারাই দেশের সব টাকা নিয়ে যায়। তারা অল্প কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে কিন্তু প্রচুর মুনাফা করে। আমরা চাই দেশের টাকা দেশেই থাকুক।”
মেইড ইন ভারত- বা ভারতের তৈরি। তার কোম্পানির পণ্যগুলোর গায়ে এটা লেখা। হিন্দিতে। বাবা রামদেব মনে করেন তার ব্যবসার সাফল্য এটাই।
ভারতীয় উপাদান দিয়েই এসব তৈরি করা হয়। চুল পড়া বন্ধ করার তেল থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - প্রায় সবই আছে তার পণ্যের তালিকায়।
আর সবচে বেশি বিক্রি হয় ঘি, যা গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয়।
মুসলির মতো বিদেশি খাবারও তৈরি করে পাতাঞ্জলি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাজার হাজার অনুসারী, টিভিতে ইয়োগা অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ এবং এসবের সাথে আধ্যাত্মিকতার সংমিশ্রণে ফুলে ফেঁপে ওঠেছে বাবা রামদেবের এই ব্যবসা।
এর পেছনে খুব বড়ো একটা কারণ তার ভক্তরা। যারা তার ব্যবসা দেখাশোনা করেন, এই কাজের জন্যে তারা কোনো বেতন নেন না তাদের গুরুর কাছ থেকে। ফলে উৎপাদন খরচও কমে যায়। বাবা রামদেব বলেছেন তার কোম্পানির বিজ্ঞাপন খরচও অন্যদের তুলনায় অনেক কম।
তবে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। অভিযোগ- কর ফাঁকি, ভূমি দখল ইত্যাদি।
সারা দেশে এই কোম্পানির জমির পরিমাণ এক হাজার একরেরও বেশি।
পাতাঞ্জলির পণ্যের তালিকায় সবশেষ যুক্ত হয়েছে ইন্সট্যান্ট নুডলস।
এই পণ্যটি এখন সমস্যায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এধরনের খাবার তৈরির লাইসেন্স নেই এই প্রতিষ্ঠানটির।
এখন যেসব পণ্য বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে তার মধ্যে রয়েছে ত্বকের ক্রিম, শিশুদের জন্যে পণ্য।
কোম্পানির সামনে আগামী বছরের টার্গেট সাড়ে সাতশো মিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্যবসায়ী বাবা রামদেবের এখন নিশ্বাস ফেলার অবস্থা নেই, যেমনটা তিনি তার অনেক ইয়োগা কসরতে দেখিয়ে থাকেন, এবং যার জন্যে তিনি তার ভক্তদের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন।
২১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�