এটিএমে ভাইরাস, টাকা গায়েব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোববারের বিকেল। কেউ গিয়েছিলেন সিনেমা দেখতে আবার কেউ ছিলেন বাড়িতেই। পকেট কিংবা ব্যাগে রাখা ছিল এটিএম কার্ড। হঠাৎই মোবাইলে এসএমএস, এই মাত্র অমুক জায়গার এটিএম থেকে আপনি এত টাকা তুলে নিলেন।
ভয়ে কেউ কেউ ফোন করে এটিএম কার্ড ‘ব্লক’ও করেছিলেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার অনেকেই ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন, কারো খোয়া গেছে ৬ হাজার টাকা, কারো আবার ২ লাখ ৪০ হাজার।
এক-দু’জন নয়, শনিবার রাত ৯টা থেকে রোববার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এভাবেই খোয়া গেছে প্রায় জনা দশেক গ্রাহকের টাকা। সবারই বাড়ি ভারতের মধ্যমগ্রামে। তারা প্রত্যেকেই পুলিশকে জানিয়েছেন, কেউই তাদের ফোন করে এটিএম পিন বা কার্ডের খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চায়নি। অনলাইনে শপিংও করেননি কেউ। তবুও এমন ঘটনা।
মধ্যমগ্রামের বসুনগরের বাসিন্দা চৈতালী ঘোষ। সোমবার মধ্যমগ্রামে ইউকো ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে চৈতালীর বাবা জয়নারায়ণ ঘোষ বলেন, রোববার রাত ১২টা নাগাদ মোবাইলে মেসেজ এল, ৪৯ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। কাউকে পিন বা কার্ড নম্বর দিইনি। কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যাঙ্কও কিছু বলতে পারছে না।
প্রতারিতদের মধ্যে অনেকে এ দিন মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বঙ্কিমপল্লির বাসিন্দা দেবার্ঘ্য দত্ত। তার কথায়, রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এসএমএস আসে, এ জে সি বসু রোডের একটি এটিএম থেকে ৬ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এটিএম কার্ড ব্লক করে দিই। তারপর সোমবার সকালে ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে আরো ১০ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও ধারণা হয়েছিল, শুধু ইউকো ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের টাকাই খোয়া যাচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সিটি ব্যাঙ্কের গ্রাহক পম্পা বিশ্বাসের ২ লাখ ৪০ হাজার, স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহক কৃষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪৬ হাজার এবং আরো অনেকের ওই সময়ের মধ্যেই টাকা খোয়া গেছে। আরো দেখা যায়, প্রতারিতদের মধ্যে মিল হলো, তারা প্রত্যেকেই মধ্যমগ্রাম ইউকো ব্যাঙ্ক সংলগ্ন নির্দিষ্ট একটি এটিএম থেকেই টাকা তুলেছিলেন।
সুতপা মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রুদ্রদীপ এ দিন বলেন, মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ হাজার টাকা খোয়া গেছে। ক’দিন আগে ইউকো ব্যাঙ্কের ওই এটিএম থেকেই টাকা তুলেছিলাম। সোমবার মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ জানাতে দিয়ে শুনি, প্রতারিতরা সবাই এক সপ্তাহের মধ্যে ওই এটিএম থেকেই টাকা তুলেছেন। দিন কয়েক আগে এটিএম সারাতে লোকও এসেছিল।
কী বলছে ব্যাঙ্ক? ইউকো ব্যাঙ্কের মধ্যমগ্রাম শাখার ম্যানেজার মলয় দে বলেন, সব অভিযোগ উপরমহলে জনিয়েছি। ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর জে কে গর্গ বলেন, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ওই ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার (তথ্যপ্রযুক্তি) অতুল সিংহ বলেন, ইউকো ব্যাঙ্কের মধ্যমগ্রাম শাখার চার গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ সোমবার দুপুরে পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্য বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে এমন ঘটনা অসম্ভব বলে মনে করছেন না সাইবার অপরাধের তদন্তকারীরা। সাইবার জগতের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছেন, রাজ্য পুলিশের এমন এক কর্তা জানান, এটিএম থেকে গ্রাহকদের তথ্য চুরি হতে পারে। এটিএমে গোপন ক্যামেরা রেখে গ্রাহকের কার্ড নম্বর, পিন, পাসওয়ার্ড জেনে নেয়া অসম্ভব কিছু নয়।
এছাড়া এটিএম মেশিনে যেখানে কার্ড পাঞ্চ করা হয়, সেখানে নকল কার্ড রিডার রেখে গ্রাহকদের কার্ডের খুঁটিনাটি তথ্য জানা এবং ভাইরাসের মাধ্যমেও তা চুরি করা যায়। পাসওয়ার্ড টাইপ করার সঙ্গে সঙ্গে তা কপি করে নেবে সেই ভাইরাস। এটিএমে নজরদারির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর কারসাজিতেও তথ্য চুরি সম্ভব।
ঘটনাটি জেনে সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, এ ক্ষেত্রে এটিএম থেকেই তথ্য চুরির সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, এটিএমে তথ্য চুরি হয়ে থাকলে গ্রাহকদের কিছু করার থাকে না। ফলে শুধু গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়িয়ে সুবিধা হবে না। ব্যাঙ্কগুলোকেও গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার
২২ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম
�