শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪:১৮

লক্ষাধিক সংখ্যালঘু হ'ত্যায় স'মালো'চিত রাজাপাকসে ভাইয়েরা আবারো শ্রীলংকার ক্ষমতায়

লক্ষাধিক সংখ্যালঘু হ'ত্যায় স'মালো'চিত রাজাপাকসে ভাইয়েরা আবারো শ্রীলংকার ক্ষমতায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার র'ক্তক্ষ'য়ী গৃহযু'দ্ধের শেষ পর্যায়ে যে দুই ভাই দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন, ১০ বছর পর তারা আবারো ক্ষমতায় ফিরেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে আ'শ'ঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া গোটাভায়া রাজাপাকসে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। কলম্বোতে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শপথ নেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।

রবিবার তার ছোটভাই গোটাভায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সকল শ্রীলংকান নাগরিকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে দেশ শা'স'ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো রাজাপাকসে ভাইদের ক্ষমতায় আসার বিষয়টি নিয়ে আ'শ'ঙ্কা প্রকাশ করেছে।

শেষবার তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ব্যাপক আকারে মানবাধিকার ল'ঙ্ঘ'নের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা অভিযোগ করছেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। 

সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার নিয়মের কারণে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। সেসময় গোটাভায়া ছিলেন তার ক্ষমতাশালী প্রতিরক্ষা সচিব। সেসময় কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দু'জনই।

রাজাপাকসে'রা কেন সমালো'চিত?

২০০৯ সালে বি'চ্ছি'ন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের (এলটিটিই) পরাজয়ের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল দুই রাজাপাকসে ভাইয়ের। বলা হয় কয়েক দশক ধরে চলা শ্রীলংকার ঐ গৃহযু'দ্ধে অন্তত এক লাখ সংখ্যালঘু তামিল হিন্দু মা'রা যায়।

গৃহযু'দ্ধের শেষদিকে হাজার হাজার মানুষ নি'খোঁ'জ হয়। অনেকেই নি'র্যা'তিত হয়েছেন বা নি'হ'ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরকম অনেক অভিযোগ রয়েছে যেখানে আত্মসমর্পণ করা এলটিটিই সেনাদের হ'ত্যা করা হয়েছে।

সাদা পতাকা দেখানোর পর বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেয়ার পরও তাদের হ'ত্যা করা হয়েছে - এমন অভিযোগও রয়েছে। তারা বলছেন, এসব ঘটনার ভিডিওসহ প্রমাণও রয়েছে। তবে সরকার সবসময়ই ঢালাওভাবে এসব অভিযোগ অ'স্বী'কার করেছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যু'দ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতেও গু'মের ঘটনা অব্যাহত থেকেছে। তারা বলছেন, রাজাপাকসেদের বি'রো'ধী হিসেবে মনে করা হয়, এমন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদের আ'ট'ক করার পর তাদরেকে আর কখনো দেখা যায়নি।

ঐসব ব্যক্তিদের নি'খোঁ'জ হওয়ায় বিষয়ে রাজাপাকসে সরকারের কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করে তারা। এবছরের শুরুতে গোটাভায়া রাজাপাকসে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন তার বি'রু'দ্ধে যু'দ্ধা'প'রা'ধের অভিযোগ 'ভিত্তিহীন।'

যুদ্ধের সময় নি'খোঁ'জ হয়ে যাওয়া তামিল সেনাদের পরিবারের সদস্যরা আজ অবধি তাদের হা'রিয়ে যাওয়া স্বজনদের পরিণতি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে বি'ক্ষো'ভ কর্মসূচি পালন করেন।

রাজাপাকসেদের সমর্থক কারা?

এবছরের এপ্রিলে ইস্টার সানডেতে হওয়া বোমা হা'ম'লার পর শ্রীলংকায় আবারো অস্থিরতা শুরু হয়। শ্রীলংকার পূর্ববর্তী সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার দু'র্ব'লতা থাকার কারণেই সম্ভাব্য হা'ম'লার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পায়নি তারা।

কিন্তু এপ্রিলের হা'ম'লার পর মুসলিমদের বি'রু'দ্ধে হওয়া গ'ণবি'ক্ষো'ভ এবং ঘৃ'ণা উ'দ্রে'ককারী বক্তব্যের কারণে সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের অনেকেই আ'ত'ঙ্কজ'নক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন। সংখ্যালঘু তামিলরাও নতুন প্রেসিডেন্টকে এখনো স'ন্দে'হের চোখে দেখেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমর্থনই গোটাভায়া রাজাপাকসের নির্বাচনে জয়ের পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলংকার ২.২ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগই সিংহলি এবং তাদের সিংহভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তামিল জনগোষ্ঠী এবং মুসলিমরা সংখ্যালঘু।

শ্রীলংকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নাগরিকদের অধিকাংশই গোটাভায়া রাজাপাকসেকে প্র'ত্যা'খ্যান করেছেন। এসব অঞ্চলের বাসিন্দা মূলত তামিল হিন্দু ও মুসলিমরা, যারা গোটাভায়া রাজাপাকসের প্রতিপক্ষ সাজিথ প্রেমাদাসাকে সমর্থন করেছিলেন।

বর্তমান পরিস্থিতি কী?

সংখ্যালঘুদের অনেকেই মনে করেন এখন পর্যন্ত যেরকম ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা আশ্বাসজনক নয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই গোটাভায়া রাজাপাকসে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি বলেন, যে তাকে যারা ভোট দিয়েছে এবং যারা দেয়নি, দুপক্ষের নেতা হিসেবেই কাজ করবেন তিনি।

কিন্তু শপথ গ্রহণের সময় তিনি পরিস্কারভাবে বলেন যে সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে 'যেমন সমর্থন আশা করেছিলেন' তা না পাওয়ায় তিনি ক্ষুন্ন। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই জানতাম যে জয়ের জন্য শুধু সিংহলিদের ভোটই প্রয়োজন আমার। তবুও তামিল ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি বিশেষ আহ্বান করেছিলাম আমি। তাদের কাছ থেকে এই মাত্রার প্র'ত্যা'খ্যা'ন আশা করিনি আমি।"

শ্রীলংকার গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নিয়েও এরই মধ্যে আ'শ'ঙ্কা তৈরি হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ধারণা করা যাচ্ছে, সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী বা'তিল করবে সরকার। ঐ সংশোধনী অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন। 

এছাড়া মানবাধিকার, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও জন প্রশাসনের বি'রু'দ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্তে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়গুলোও রয়েছে ঐ সংশোধনীতে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া ক্ষমতাবলে এরই মধ্যে গোটাভায়া রাজাপাকসের বি'রু'দ্ধে আনা দু'র্নী'তির অভিযোগ বা'তি'ল করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে