আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ নিয়ে গোটা দেশে যখন তোলপাড় চলছে তখন সোমবার তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী।
এদিন তিনি বলেন, 'নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কেউ স্থায়ী সরকার গড়তে পারে ঠিকই। কিন্তু তার মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মত তার পক্ষে রয়েছে এমন নয়, তাই তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয়। এটাই আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের সার কথা'।
ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত অটলবিহারী বাজপেয়ী স্মৃতি বক্তৃতায় এদিন প্রধান বক্তা ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কমবেশি পাঁচ দশকেরও বেশি দীর্ঘ যার যাত্রাপথ। সেই তিনি প্রণববাবু এদিন বাজপেয়ীজির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বক্তৃতায় কার্যত মণিমুক্তো তুলে আনেন। আর তার পরই সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে বলতে গিয়ে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ফের নজর কেড়ে নেন সর্বভারতীয় রাজনীতির।
নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সরকার কেন সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয় তা বিশদে ব্যাখ্যাও করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কখনওই কোনও দল বা ব্যক্তি ৫১ শতাংশ ভোটারের জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি। ১৯৫২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কখনওই তা হয়নি। ১৯৫৭ সালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ৪৮০ টি আসনের মধ্যে ৩৭১টি আসনে জিতে সরকার গড়েছিলেন।
কিন্তু তখনও ৪৭.৭৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ৮৪ সালের ভোটে রাজীব গান্ধী ৫১৪ টি আসনের মধ্যে ৪০৪ টিতে জিতলেও তিনিও ৫১ শতাংশ ভোট পাননি। প্রণববাবু অবশ্য উনিশের লোকসভা ভোটের প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য হল, এবার লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদী ও তার দল বিজেপি একাই তিনশ'র বেশি আসনে জিতলেও মাত্র ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
অর্থাত্ এই সরকারকেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার বলা যায় না। প্রশ্ন হল, এর বার্তা কী? তাও ব্যাখ্যা করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। প্রণববাবু বলেন, এটাই একটা পরিণত গণতন্ত্রের লক্ষণ। তার কথায়, এর অর্থ হল মানুষ কোনও দলকে স্থায়ী সরকার গড়ার তথা দেশ শাসনের সুযোগ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এটাও বুঝিয়ে দিচ্ছে ওই সরকারকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।
এখানেই থেমে থাকেননি প্রণববাবু, তিনি বলেন, যতবার দেশের সরকার এই সার মন্ত্র মেনে চলেনি, ততবারই দেশের মানুষ তাদের শা'স্তি দিয়েছে। তার কথায়, দু'র্ভা'গ্যের বিষয় হল এর পরেও রাজনীতিকরা অনেকেই শিক্ষা নেননি। তারা মনে করেন, মানুষ যখন তাদের সরকার গড়ার অধিকার দিয়েছে, তখন তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবটা কিন্তু তা নয়।
প্রণববাবুর এই মন্তব্য দেশে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের প্রতি বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ, সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সংসদে পাশ করাতে গিয়ে শাসক দলের একাংশের মনোভাব এমন ছিল যে, যেহেতু সংসদে তাদের সংখ্যার তাকত রয়েছে, তাই বি'রো'ধীরা যাই বলুন তারা বিল পাশ করাতেই পারেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদি-অমিত শাহ বাহিনীর এই রাজনৈতিক দর্শন যে ভুল, এটা যে তাদের স'র্বনা'শ ডেকে আনতে পারে, এই দম্ভের জন্য তাদের যে শাস্তি দিতে পারেন জনতা সেই বার্তাটাই এদিন প'ষ্টাপ'ষ্টি দিতে চেয়েছেন প্রণববাবু।